কর্মসূচিতে মাঠে নামছে বিএনপি, শান্তি সমাবেশ আওয়ামী লীগের
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে মহানগরের থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচিতে মাঠে নামছে বিএনপি ও সরকারবিরোধী সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে এবার পদযাত্রা কর্মসূচিতে শোডাউনের মাধ্যমে ১৩ সাংগঠনিক মহানগরের সক্ষমতা যাচাই করতে উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। অন্যদিকে এদিন ‘শান্তি সমাবেশের’ পাশাপাশি ব্যাপক মহড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, মহানগরের থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচির নামে বিএনপি বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে দাবি করে তা মোকাবিলায় এ শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে।
রাজধানীতে শান্তি সমাবেশে ব্যাপক মহড়া দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। একই সঙ্গে দেশের অন্য মহানগরেও এই কর্মসূচি পালন করবে দলটি। সেখানে নগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
নেতারা বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত তাদের এমন কর্মসূচি চলমান থাকবে। এগুলো কোনো দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নয় বলেও দাবি তাদের।
শান্তি সমাবেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা-দাবি করে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, যারা অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে, তাদের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করাই মূল লক্ষ্য।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে শান্তি সমাবেশে যোগ দেবেন। তবে আমরা কারও কর্মসূচিতে বাধা দেব না। আমরা শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব।’
এদিকে আগামীকাল শনিবার ৪ মার্চ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা মহানগরের থানায় থানায় একযোগে পদযাত্রা কর্মসূচি নির্ধারণ করা আছে বিএনপির।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, আমাদের সর্বাত্মক প্রস্ততি রয়েছে মহানগরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নে। বিএনপি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগকে বারবার আহ্বায়ন জানিয়েছেন আমাদের দলের মহাসচিব যাতে বিএনপির কর্মসূচির দিন তারা যেন কর্মসূচি না দেয়। তারা কোনো কর্ণপাত করেননি। কিন্তু বিএনপি কোনো উসকানিতে পা দেবে না। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করব।
গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, দমন-নিপীড়ন বন্ধ, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দী নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে হবে এই পদযাত্রা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ৪ মার্চ বিকাল ৩টা থেকে একযোগে মহানগরের ৯৯ থানা এবং ৮ স্থানে পদযাত্রা করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরে ২৬ থানায়, দক্ষিণে ২৪, নারায়ণগঞ্জে ৩, গাজীপুরে ৮, চট্টগ্রামে ১৫, রাজশাহীতে ৪, খুলনায় ৫, বরিশালে ৩, রংপুরে ৬ ও সিলেট মহানগরের ৫ থানায় পালন করা হবে এ কর্মসূচি। তবে ৩ মহানগরে থানা না থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড মিলে ৮ স্থানে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৩ ওয়ার্ড মিলে ৫ স্থানে, ফরিদপুরে ২৭ ওয়ার্ড মিলে ১ স্থানে ও কুমিল্লা মহানগরের ২৭ ওয়ার্ড মিলে দুই স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি বের করবে। পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধান করে গঠন করা হয়েছে সমন্বয় টিম। পদযাত্রা কর্মসূচি থেকে সাধারণ জনগণের দাবিকে সামনে রেখে আগামী ১১ মার্চ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার মনে হয় এখন কারও মুক্তির দাবি, কিংবা মামলা প্রত্যাহারে দাবি করা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। এই সরকারকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। সেই দাবিটাই আমাদের মুখ্য হওয়া দরকার। এই সরকারকে সরাতে হবে। তারপর একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি সরকার দেশের জন্য অপরিহার্য।
এদিকে পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ বড় মহানগরের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা মহানগরের দিকে বেশি নজর দলের হাইকমান্ডের। যদিও সম্প্রতি কয়েকটি কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর তাদের শক্তি দেখিয়েছে। এবার থানায় থানায় সক্ষমতা দেখাবে বলে প্রত্যাশা করেন নীতিনির্ধারকরা। পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
পদযাত্রার কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করেছে বিএনপি। এ টিমে থাকা নেতারা মহানগরের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। এ ছাড়া সমন্বয় টিমে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়কারী ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সহকারী সমন্বয়কারী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি অথবা আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক অথবা ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক অথবা সদস্যসচিব সদস্য হিসেবে থাকবেন। বিভাগ অথবা মহানগরের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা, সাবেক সংসদ সদস্য মহানগরের থানা পদযাত্রায় সম্পৃক্ত ও অংশগ্রহণ করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার (৪ মার্চ) বিজয়নগর পানির ট্যাংক সংলগ্ন সড়ক থেকে শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় ঘুরে কালভার্ট রোড হয়ে আবারও বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে পর্যন্ত ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে সরকারের দমন-পীড়ন, গণগ্রেপ্তার, খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
এদিন বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথের এফডিসি সংলগ্ন এলডিপির কার্যালয়সহ রাজধানীর আরও ৩টি স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম এলডিপির নেতৃত্বে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর এলডিপির পদযাত্রা সুবাস্তু থেকে লিংক রোড, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পদযাত্রা এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মগবাজার হয়ে পার্টি অফিস, ঢাকা মহানগর পূর্ব এলডিপির পদযাত্রা কাজলা ব্রিজ থেকে যাত্রাবাড়ী, ঢাকা মহানগর পশ্চিম আদাবর নবদয় হাউজিং কাঁচাবাজার থেকে চার রাস্তার মোড়। এ ছাড়া রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)।
শনিবার (৪ মার্চ) বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতাদের দমন-পীড়ন ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শুরু হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা।
এমএইচ/এসজি