সংসদ উপনেতা হচ্ছেন মতিয়া চৌধুরী
জাতীয় সংসদের উপনেতা হিসেবে প্রবীণ রাজনীতিক মতিয়া চৌধুরীকে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দল।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।
সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে গত ১১ সেপ্টেম্বর সংসদ উপনেতার পদটি শূন্য হয়েছিল।
সভা শেষে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে মতিয়া চৌধুরী উপনেতা, এটাই ফাইনাল।’
ক্ষমতাসীন দলের উপনেতা মনোনয়নের বিষয়টি এখন স্পিকারকে জানানো হবে। স্পিকার তখন মতিয়া চৌধুরীকে উপনেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেবেন। পরে সংসদ সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। সংসদ উপনেতা মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ উপনেতা হিসেবে মতিয়া চৌধুরীর নাম প্রস্তাব করেন। তা সমর্থন করেন প্রধান হুইপ ও সংসদীয় দলের সেক্রেটারি নূর-ই আলম চৌধুরী।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পর থেকে সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। গত ১১ সেপ্টেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি তিনটি সংসদে একই পদে ছিলেন।
সাজেদা চৌধুরীর মতো মতিয়া চৌধুরীও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি ২০০৯ ও ২০১৪ সালের শেখ হাসিনার সরকারে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। তার আগে ১৯৯৬ সালের সরকারেও মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নারী হিসেবে প্রথম কোনো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আসা মতিয়া গত শতকের ষাটের দশকে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি তখন ডাকসুর জিএসের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
এক সময়ের বাম এই নেতা পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজপথের লড়াইয়ে থাকেন সামনের কাতারে, হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৃহস্পতিবারের সভায় মতিয়া চৌধুরী ছিলেন সামনের সারিতে।
জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা যখন দলে ‘সংস্কারের’ দাবি তোলেন, তখন যে কয়েকজন নেতা শেখ হাসিনার পাশে শক্তভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের একজন মতিয়া।
‘সংস্কারপন্থী’দের দলের নীতি-নির্ধারণী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর মতিয়া চৌধুরীর উপর শেখ হাসিনার আস্থা দেখা গেছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে।
সরকার গঠনের পরপরই ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের পরপরই যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে গিয়েছিলেন, সহকর্মী হারিয়ে বিক্ষুব্ধ সেনাদের মাঝে যাওয়ার সেই পদক্ষেপে তার সঙ্গী হয়েছিলেন রাজপথের সাহসী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মতিয়া।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর দল ও সরকার আলাদা করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মতিয়া চৌধুরীকে সরকারে না রাখলেও তার প্রতি আস্থার কমিতি হয়নি শেখ হাসিনার। সম্প্রতি ঢাকার মেট্রোরেল উদ্বোধনে মতিয়াকে সঙ্গী করেছিলেন শেখ হাসিনা, মেট্রো ট্রেনের প্রথম যাত্রায় তাকে বসিয়েছিলেন নিজের ও বোন শেখ রেহানার মাঝে।
৮১ বছর বয়সী মতিয়া শেরপুর-২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন। তার স্বামী খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমান ২০০৮ সালে মারা যান।
এনএইচবি/এসএন