দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার মানুষ সর্বশক্তি নিয়ে সারাদেশে জেগে উঠেছে। জনগণ আর ঘরে বসে বসে মাফিয়া সরকারের হাতে অসহায়ের মতো জান-মাল হারাতে চায় না। জনগণ এবার আটঘাট বেঁধে শেষ প্রস্তুতি নিয়েই সব বাধার বিন্ধ্যাচল উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে এসেছে।
সোমবার (১৭ অক্টোবর) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন রিজভী।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ন ব্যর্থ নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে বলছেন, দুর্ভিক্ষ আসছে! আপনি যে রাষ্ট্রনায়ক নন, আপনি যে আওয়ামী নায়ক, আপনার এ কথায় আবারো প্রমাণ করলেন। যারা লুটপাটের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত তাদের দ্বারা অনাহার-অর্ধাহার আর দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। উন্নয়ন উন্নয়ন বাজনা বাজিয়ে দেশের মানুষের কান ঝালাপালা করে এখন জনগণের হাতে হারিকেন আর ভিক্ষার ঝুলি তুলে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাদের উন্নয়ন ভেসে গেছে বঙ্গোপসাগরে।
অবশ্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এখন স্বীকার করছেন, দেশ সংকটের দিকে যাচ্ছে। সামনের পরিস্থিতি খারাপ। রিজার্ভ সংকট, ডলার নেই, তাই তেল-গ্যাস আমদানি করা যাচ্ছে না! লুটপাট আর ব্যর্থতা চেপে রাখার জন্য সবকিছুতেই সরকার বিদেশের দোহাই দিচ্ছে। তারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে। অথচ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ২০০৩ সালে ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যে ন্যাটো বাহিনীর যুদ্ধে আরও কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তখন জনগণের ভোটে নির্বাচিত খালেদা জিয়ার সরকার সবকিছু স্বাভাবিক রেখেছিলেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দুর্ভিক্ষ হবেই এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ৭৪ সালেও দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তখন কোথাও যুদ্ধ ছিল না। দেশের জনগণ জানে-মানে-বিশ্বাস করে বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতি-দুর্ভিক্ষ আর আওয়ামী লীগ সমার্থক। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলতে চাই-কেন দুর্ভিক্ষ আসবে? দুর্ভিক্ষ আসার কারণ আপনার দল জনস্বার্থবিরোধী। আপনি একটি এতিম প্রজন্ম তৈরি করতে চান। আর তাই বেপরোয়া লুটপাট করে, গণতন্ত্রকে গায়েব করে, ভোট-নির্বাচনকে ক্ষতবিক্ষত করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার সুখস্বপ্নে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন।
তিনি বলেন, রাজপথে জনগণের বাঁধভাঙা উত্তাল স্রোত দেখে নিশিরাতের সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের বুকে কাঁপন ধরেছে। মাত্র দুইটি গণসমাবেশ দেখেই বিনাভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রলাপ বকতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে পৃথিবীতে সম্ভবত হাছান মাহমুদ সাহেবই একমাত্র তথ্যমন্ত্রী, যিনি সঠিক তথ্যকে টিনের বাক্সে তালা দিয়ে অসত্য তথ্য সম্প্রচার করেন।
রিজভী বলেন, বিএনপি মানুষ জড়ো করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত নয়। বিএনপির এই গণসমাবেশ মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। স্বাভাবিক জীবনের গ্যারান্টির জন্য। দেড় যুগের দুঃশাসনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে এখন রাজপথে নেমে এসেছে সারাদেশের মানুষ। রাস্তায় যানবাহন বন্ধ করে দিচ্ছেন, পথে পথে বাধা। হামলা, গ্রেপ্তার, মামলা করছেন। তারপরও গণসমাবেশমুখী কাফেলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। চিড়ামুড়ি নিয়ে দিন-রাত হেঁটে কিংবা ভ্যানে-ট্রলারে করে এসে সমাবেশ মাঠে-ময়দানে, রাস্তায়, ফুটপাথে, গলিতে, ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে একত্রে, এমনকি বাথরুমের পাশে কাটাচ্ছেন হাজারো দেশপ্রমিক জনতা। এই অভূতপূর্ব দৃশ্য, এদের অবদান-ত্যাগ বৃথা যাবে না। এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আপনারা নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তা না হলে গণঅভ্যুত্থান আসন্ন।
তিনি বলেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিককে তিনদিন ধরে গুম করে রাখার পর গতকাল সকালে পুলিশ আদালতে সোপর্দ করেছে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হলেও তা তারা স্বীকার করেনি। আবার গতকাল তাকে পুলিশই হাজির করে। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে আদালতে হাজির করতে হয়। অথচ পুলিশকে তৈরি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাতিয়ার হিসেবে। আমি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
এমএইচ/আরএ/