বিএনপি এখন উভয় সংকটে: কাদের
বিএনপির আন্দোলনেও বিপদ, নির্বাচনেও ভয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এখন উভয় সংকটে রয়েছে। তাদের এখন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে আওয়ামী লীগের কদমতলী থানা ইউনিটের ত্রিবার্ষিকী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, ক্ষমতায় আমরা, আমরা কেন অশান্তি করব? বিএনপি বার বার বাজে কথা বলে। আওয়ামী লীগ নৈরাজ্য চায়, অশান্তি চায়। অশান্তি আর নৈরাজ্য হলে তো ক্ষতি আমাদের। যেহেতু আমরা ক্ষমতায়। জনগণকে বলব তারা (বিএনপি) কেন মিথ্যাচার করে। আমরা ক্ষমতায় থেকে নৈরাজ্য করব কেন? আমরা ক্ষমতায় থেকে অশান্তি করব কেন? আমাদের নেত্রী বলে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সংযমী হবে। আমরা কারো সভা-সমাবেশে হামলা করব না। কারো বাড়ি ঘরে হামলা করব না। আমরা সতর্ক থাকব। আমাদের উপর হামলা হলে কি করতে হবে সেটা উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি বলে দেবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মী নিজেরাই ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে ঢিল ছুঁড়ে দেয়। এ অবস্থায় পুলিশ কি তখন নীরবে বসে থাকবে?
কাদের বলেন, বিএনপি যত লাফালাফি করুক যত তাফালিং করুক কোনো কাজ হবে না। আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে বিএনপি হারবেই। ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বিশৃঙ্খলা করবেন এই সব যারা করবেন তাদের প্রয়োজন নেই। যেখানেই খারাপ আচরণ আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। নেত্রী কাউকে ছাড় দেন না।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নাকি বলে শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা নেই। শেখ হাসিনার প্রতি আপনাদের আস্থা থাকার দরকার নেই। আপনারা যারা এই দেশে হ্যাঁ-না ভোট করেন প্রহসনমূলক, এই দেশে যারা ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন, এই দেশে যারা আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, যারা ১৫ই ফেব্রুয়ারি মার্কা প্রহসনমূলক নির্বাচন করেছেন তাদের শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রাখার কোনো দরকার নেই। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করবে সময় মতো করবে। শেখ হাসিনার সরকার যত রকম সহযোগিতার দরকার নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবে। আপনাদের আস্থা আছে কি নেই সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। আমরা আস্থা চাইবো কোনো দলের না এদেশের জনগণের আস্থা আছে কি না শেখ হাসিনার প্রতি সেটা আগামী নির্বাচনে প্রমাণ হবে। বিএনপির আস্থা আমরা চাই না। আমাদের আস্থা দরকার জনগণের। সেই জনগণের আস্থা আছে।
তিনি আরও বলেন, সকাল বেলায় বিএনপির নেতারা ঘুম থেকে উঠে চোখ কঁচলাতে কঁচলাতে কোথায় যান? গুলশানে যান বারিধারায় যায়, কেন যায় নালিশ করতে। নাম কি বাংলাদেশ নালিশ পার্টি। গুলশানে যায় বারিধারায় যায় সকালে ব্রেক ফাস্ট রাতে যায় ডিনারে। হায়রে বড় মজায় আছে বিএনপি নেতারা। কত সুখে আছে ওই বিদেশি দূতাবাসে গিয়ে মজার মজার খাবার খায় আর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নালিশ করে। এই হলো তাদের রাজনীতি।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন উভয় সংকটে। বিএনপির এখন জলে কুমির ডাঙায় বাঘ। বিএনপির সামনে বিপদ আন্দোলনেও বিপদ নির্বাচনেও ভয়। এই অবস্থা নিয়ে কোথায় যাবেন। নেতা তো ঠিক নেই। কে হবে নেতা, কে হবে প্রধানমন্ত্রী। ২২ দলীয় জোট জগাখিচুড়ির জোট। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে সময় মতো খান খান হয়ে যাবে তাদের তথাকথিত ঐক্যজোট।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এতো মানুষের ঢল নেমেছে কদমতলীতে। এই ছবি কোনো পত্রিকায় দেখাবেন না। যত বড়ই হোক আমাদের সমাবেশ, যত বড়ই হোক আমাদের মিছিল সরকারি দলের ছবি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সেটা পত্রিকার পাতায় আসে না। এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফখরুল সাহেবের মিটিং কি এই মিটিংয়ের চেয়ে বড় হয়? ওনাদের এতো বড় বড় ছবি থাকে আওয়ামী লীগের ছবি ছাপে না। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য, বলার কিছু নেই। কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কারণ নিজের প্রচারের জন্য রাজনীতি করি না। রাজনীতি করি একটি আদর্শের জন্য। রাজনীতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচাতে। রাজনীতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে বাঁচাতে। রাজনীতি করি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বাঁচাতে। রাজনীতি করি বঙ্গবন্ধু পিতা মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে। রাজনীতি করি শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জনকে বাঁচিয়ে রাখতে। বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। একটি আদর্শের জন্য রাজনীতি করি।
তিনি বলেন, আমরা ত্যাগ স্বীকার করি। আমরা রক্ত দিই। আমরা ক্ষমতায় আছি, বন্দুকের নলের মুখে কেউ আমাদের ক্ষমতায় বসায়নি। আমরা ক্ষমতায় এসেছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, আন্দোলন করে, রাজপথ থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। বঙ্গবন্ধু রাজপথ থেকে এসেছেন, শেখ হাসিনা রাজপথ থেকে এসেছেন। আমরা রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে চাই।
কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নাছিম মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাজেদা বেগম ও হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, প্রচার সম্পাদক চৌধুরী সাইফুন্নবী সাগর ও কদমতলী থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ৫৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক প্রমুখ।
এসএম/আরএ/