হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দাতাকে সরাতে হবে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে তারা মানুষের অধিকারকে হত্যা করছে। জনসভায় এখন আমাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় নেই। এই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দাতাকে সরাতে হবে। তারা গুম, খুন করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আজ মানুষ তাদের জীবনের নিরাপত্তা চায়, ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়, বেঁচে থাকতে চায়।’
শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মুন্সিগঞ্জের মীরকাদিম পৌর শাখা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম শাওন হত্যার প্রতিবাদে এ সমাবেশ করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না।
ফখরুল বলেন, ‘এক শাওনের মৃত্যুতে বা আরেক শাওনের মৃত্যুতে, রহিম বা নূরে আলমের মৃত্যুতে মানুষের যে দাবি ও আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং অভ্যুত্থান শুরু হয়েছে, সেই অভ্যুত্থানকে দমন ও বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আর আজকে শাওনের বাবার কণ্ঠে আহাজারি শুনি নাই, চোখে অশ্রু দেখেছি। কিন্তু তার চোখে একই সঙ্গে আগুন দেখেছি। বজ্রকণ্ঠে সে বলছেন, আমি আপস করব না। তাকে ভয় দেখানো হয়েছে। বলো যে ইটের আঘাতে মারা গেছে। তুমি বলো যে, তাকে বিএনপির নেতারাই মেরেছে। কিন্তু আমাদের কাছে পরিস্কার করে ডকুমেন্ট আছে। তার ডেট সার্টিফিকেটে ডাক্তাররা পরিষ্কার করে বলেছেন, বন্দুকেই গুলিতেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাই এই মিথ্যাচার করবেন না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে শাওনের বাবা আপনাদের সামনে যা বলেছেন তিনি কিন্তু আহাজারি করেননি। তিনি বলেছেন, আমার ছেলে সংগ্রাম করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। তিনি বলেছেন, আমার ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তারা এদেশের মানুষের অধিকারকে হত্যা করেছে।’
পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। এখন আমাদের রাজপথে নেমে পুরোপুরিভাবে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যে দায়ী তাকে সরাতে হবে। শুধু শাওন নয়। এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পরে, পরপর চারজনের রক্ত নিয়েছেন এই শেখ হাসিনা। আমাদের রহিমকে নিয়েছেন, আমাদের নূরে আলমকে নিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের শাওনকে নিয়েছেন, গত পরশু আমাদের মুন্সিগঞ্জের শাওনকে নিয়েছেন। আজকে এই রক্ত ঝরিয়ে, হত্যা করে, ভয় দেখিয়ে, গুম করে, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়ে, মিল-কারখানা পুড়িয়ে দিয়ে আজ আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে চায়।’
ফখরুল বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জে তারা শুধু শাওনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি। এরপর তারা বিএনপির নেতার কারখানা জ্বালিয়ে দিয়েছে। গোটা মুন্সিগঞ্জে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সারা দেশে একটা ত্রাস সৃষ্টি করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’
জনগণের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে বলি না। ক্ষমতায় বসানোর কথা বলি দেশের জনগণকে। কারণ এদেশের মালিক হলো জনগণ। তাদের অধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে চাই। কথায় কথায় গুলি করবেন, কথায় কথায় ফেলে দেবেন এদেশের মানুষ সেটা আর সহ্য করবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিচার আর চাই না, প্রতিবাদ আর করব না। ভবিষ্যতে আমরা প্রতিরোধ করব, বিচার করব।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, ‘শেখ হাসিনা তুমি আমাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছ, তুমি আর ক্ষমতায় থাকতে পারবা না। প্রয়োজনে যুবদলের কর্মীরা সারা দেশ অচল করে দিবে। তবুও তোমাকে ক্ষমতায় থাকতে দেবে না।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আপনারা শেখ হাসিনাকে নয়, আল্লাহকে ভয় করেন। আমরা এই হাসিনা সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরে যাব না।’
এমএইচ/এসজি