নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে নতুন দল বিএসপি
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলটির চেয়ারম্যান শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী।
শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুর সিটি মহল চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দলটির প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই নতুন দলটির আগামী নির্বাচনের ভাবনা তুলে ধরেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে নতুন আত্মপ্রকাশ ঘটা বিএসপি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেছে।
সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ মাইজভাণ্ডারী বলেন, দেশের চলমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সুদৃঢ় এবং সঠিক পথে পরিচালনার জন্য আমাদের এ আয়োজন। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সুসংগঠিত একাধিক রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম থাকা আবশ্যক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম অনুষঙ্গ ভিন্নপথ ও মতের একাধিক রাজনৈতিক দল বা সংগঠন। এরই আলোকে আমরা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামে একটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। একই সঙ্গে যে চেতনায় আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেটিই হবে আমাদের পথ চলার প্রেরণা। দেশের চলমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সুদৃঢ় এবং সঠিক পথে পরিচালনার জন্য আমাদের এ আয়োজন।
তিনি বলেন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায়ে সুদৃঢ় করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনায় দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছি। ইতোমধ্যে সারা দেশে বিএসপির ৩০টি জেলায় ২০০টি উপজেলা ও থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন হয়েছে। বাকি জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলমান আছে। আমি প্রত্যাশা করি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার এই লড়াইয়ে দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হবেন। আমরা কখনই চাই না নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অস্থিতিশীল সংঘাতময় পরিবেশ সৃষ্টি হোক। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নিরাপদ এবং সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখবে নির্বাচন কমিশন। যা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিসহ জনগণের প্রত্যাশা। 'ঐক্যের সাথে দেশ গড়ি' এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অঙ্গিকারবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, মানবিক কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আদর্শিক গণতান্ত্রিক দল এবং দেশপ্রেমিক নাগরিকের বিকল্প নেই। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশ এগিয়ে চলছে। তবে উন্নয়নের সুফল পেতে প্রয়োজন সুশাসন, সম্প্রীতি-সহাবস্থান। দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সুষম গণতান্ত্রিক চর্চার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। শক্তিশালী বিরোধী দল ও সুশাসিত সরকার সুপ্রতিষ্ঠিত না হলে একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চর্চা ব্যাহত হয়।
বিএসপি চেয়ারম্যান বলেন, জোর জবরদস্তি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মানুষের নাগরিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হলে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বিনষ্ট হয়। আর তখনই সম্প্রীতি, সহাবস্থান ও মানবিক মূল্যবোধের অভাবে দেশ ও সমাজে অসহিষ্ণু বৈরী পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যা বর্তমান সময়ে গভীর হতাশাজনকভাবে দেশবাসী উপলব্ধি করছে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল ধর্ম ও মতের মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক, সম্প্রীতি না থাকলে কখনই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না, দেশে সমৃদ্ধি আসবে না। ইসলাম সকল ধর্মের মানুষের জন্য কল্যাণকর তা নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি। একমাত্র সুফিবাদী দর্শনই শান্তি ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
তিনি বলেন, অহিষ্ণুতা, একগুঁয়েমি ও স্বেচ্ছাচারিতা কখনো রাষ্ট্র ও সমাজের কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আন্দোলনের নামে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও, পোড়াও এর মাধ্যমে রাষ্ট্রের সম্পদহানি, জনগণের নিরাপত্তাহীনতা ও দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। বিরোধী দলের টুঁটি চেপে ধরে প্রতিবাদের ভাষা হরণ করে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে বাকস্বাধীনতা হরণও জনগণের কাম্য নয়। তেমনি আমরা মনে করি, মানবিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বোত্তম মানবিক গুণাবলী নিজদের জীবনে ধারণ, লালন ও অনুকরণ করতে হবে। সততা, উদারতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সর্বস্তরের মানুষের প্রতি সদাচারণ ও ভালোবাসা প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষকে শুদ্ধাচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এই কাজটি দক্ষতা ও সর্বোত্তমভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এই কাজে সুপ্রিম পার্টির নেতাদেরকেই পথ প্রদর্শক হয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়নেও বিশ্বাস করেন তিনি।
বিএসপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য পীরে ত্বরীক্বত মুফতী বাকী বিল্লাহ আল-আযহারীর সঞ্চালনায় প্রতিনিধি সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ। অতিথি ও আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. রফিকুল আলম, হযরত মাওলানা মুফতী মাসুদ হোসাইন আল্-কাদেরী, মাওলানা আহমদ রেজা ফারুকী, বিএসপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. আল্হাজ্ব কাজী মহসীন চৌধুরী, পীরে ত্বরীক্বত মুফতী কাজী গোলাম মহিউদ্দিন লতিফী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ঢালী কামরুজ্জামান হারুন, এইচএম মঞ্জুরুল আনোয়ার চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক মো. ইব্রাহিম মিয়া প্রমুখ।
এসএম/আরএ/এসজি