বিএনপির কোনটা সঠিক সেটা বোঝা মুশকিল: তথ্যমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেছেন যে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনে নামবেন। ক’দিন আগে উনিই বলেছেন, উনারা আন্দোলনে আছেন, আবার এখন বলছেন নামবেন-এখন কোনটা সঠিক সেটা বোঝা মুশকিল।
তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে ১৩ বছর ধরে আমরা শুনছি উনারা আন্দোলনে নামবেন। আর উনাদের আন্দোলন মানে হচ্ছে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা, গাড়িঘোড়া ভাঙচুর, নিজেরা নিজেরা মারামারি করা, পুলিশের উপর হামলা করা। এবার যদি এগুলো করা হয় তাহলে জনগণ তাদেরকে প্রতিহত করবে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের পাশে থাকবে।’
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ-বিএসপি আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলী এবং প্রেস কাউন্সিলের সদস্য ও দৈনিক প্রভাত সম্পাদক মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক, সচিব মো. শাহ আলম, গণযোগাযোগ অধিদপ্তেরের মহাপরিচালক মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ জালাল, সাধারণ সম্পাদক এম জি কিবরিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মঞ্জুর বারী মঞ্জু প্রমুখ সভায় বক্তৃতা করেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির সবকিছুতেই না বলার যে রাজনীতি সেটি অবসান হওয়া প্রয়োজন। যেখানে না বলা দরকার অবশ্যই সেখানে না বলবে। কিন্তু সবকিছুতেই না বলা আর সবসময় সাংঘর্ষিক রাজনীতি করা দেশের উন্নয়ন অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে, যেটি বিএনপি করছে। আমি আশা করব সাংঘর্ষিক রাজনীতি আর না বলার রাজনীতি থেকে বিএনপি নিজেকে মুক্ত করবে।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সাড়ে ১২শ’ পত্রিকা, অথচ পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালে দেখি সেখানে এতো পত্রিকা নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদপত্রবান্ধব, সাংবাদিকবান্ধব, সেকারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে অনেক পত্রিকার ডিক্লারেশন আছে কাগজে কিন্তু সেগুলো নিয়মিত বের হয় না, যেদিন বিজ্ঞাপন পায় সেদিন বের হয়। অনেক পত্রিকার যিনি সম্পাদক, তিনিই রিপোর্টার। অনেক পত্রিকায় দেখা যায় যে, সাংবাদিক নিয়োগ দেয়া হয় কিন্তু তাদেরকে বেতন দেওয়া হয় না, বলা হয় যে তোমার বেতন তুমি সংগ্রহ কর।’
যে সমস্ত পত্রিকা নিয়মিত বের হয় না সেগুলো চিহ্নিত করেছি জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিক এবং প্রকাশকদেরও দাবি ছিল, পত্রিকা প্রকাশে অনিয়মের জন্য যাতে গণমাধ্যমে বদনাম না হয়। সে প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই চার শ’র বেশি পত্রিকা চিহ্নিত করা হয়েছে। তারমধ্যে দুই শ’ পত্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে কেউ যদি সংশোধন হতে চায় তাহলে সেই সুযোগ থাকবে।’
জাতীয় দিবসগুলোতে এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দিবসে পত্রিকায় ছাপানোর জন্য ক্রোড়পত্র প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক যে অবস্থা বিরাজমান সেটি আপনারা জানেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দসীমার কথাও আপনারা জানেন। কোনো কোনো বড় পত্রিকার ১০-১২ কোটি টাকা বিলও বকেয়া রয়েছে। অবশ্য সরকারি বকেয়া বিল আজ হোক, কাল হোক অবশ্যই পাবেন। কিন্তু আগের মতো যথেচ্ছভাবে ক্রোড়পত্র দেওয়ার সুযোগ আর নেই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের কাজ মানুষের কাছে শুধু সংবাদ পরিবেশন করাই নয়, সমাজ ও জাতিকে পথ দেখানো, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হয়। মানুষ যদি স্বপ্ন না দেখে, যদি শুধু হতাশা দেখে, আশা না থাকে, সে এগুতে পারে না। সংবাদপত্র যদি ভালো সংবাদগুলো ভাল করে ছাপায় তাহলে জাতি স্বপ্ন দেখবে, আশা থাকবে। দেশের সাফল্য, দেশ বদলে যাওয়ার কাহিনী, বিশ্ব কী বলছে, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘ কী বলছে, সেগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে মানুষকে জানাই, মানুষ আশাবাদী হবে, স্বপ্ন দেখবে। সমাজে সমালোচনা থাকতে হবে, সমালোচনা তারই হবে যে দায়িত্বে থাকে, কিন্তু একইসঙ্গে ভাল কাজের প্রশংসাও থাকতে হবে।
শুদ্ধাচার পুরস্কার
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং এর সংস্থাগুলোর মনোনীত কর্মচারিদের হাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার তুলে দিয়েছেন মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স. ম. গোলাম কিবরিয়া, মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ কাউসার আহাম্মদ, আইন কর্মকর্তা মো. সাঈদুর রহমান গাজী, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. রেজাউল করিম ও অফিস সহায়ক মোসাম্মদ সেলিনা বেগমের হাতে শুদ্ধাচার পুরস্কারের সনদ, ক্রেস্ট ও একমাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব মো. ফারুক আহমেদ, খাদিজা বেগম এবং ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
এনএইচবি/এমএমএ/