মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী আড্ডাখানা হিসেবে জাসদ গণবাহিনীর সৃষ্টি: নানক
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী আড্ডাখানা হিসেবেই জাসদ গণবাহিনী সৃষ্টি করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় দলের মহিলা বিষয়ক উপ কমিটির শোক দিবসের আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
নানক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের অনুচর জিয়াউর রহমানকে ঢুকিয়ে দিয়ে, খন্দকার মোশতাকদের ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করতে চেয়েছিল। ব্যর্থ হয়ে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেদিন আমাদের দলের ভেতরে অস্থিরতা ছিল, সেই অস্থিরতা শুভফল বয়ে আনেনি।
তিনি বলেন, ‘জেনারেল জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানতে পারেনি। মোশতাকরা মানতে পারেনি বলে বাংলাদেশ মুসলিম বাংলা নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭২ সালে। এরা সারাদেশে আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। সেসময় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইতিহাস আলোচনা করতে গেলে সত্য কথা আমাকে বলতেই হবে। সেদিন জাসদ, গণবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছিল। সেদিন আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হয়েছিল।’
বামজোটের হরতাল দেশের জনগণ টের পাইনি বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নানক বলেন, আজকে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তখন কিছু অপশক্তি মাঠে নেমেছে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য জনগণের মাঝে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। গতকাল একটি হরতাল পালন হয়ে গেল বাংলাদেশে, কেউ টের পেল না। রাস্তায় যানজট ছিল।
দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে নানক বলেন, ‘আমাদের খুব সর্তক হতে হবে। ওরা আবার নেমেছে। ওরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেবে না। সে কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা নেমেছে। আপনারা পাকিস্তানি প্রেসক্রিপশনে চলছেন। এদেশে ২১ আগস্টে গ্রেনেট হামলা হয়েছে, কোথায় ছিল মানবতা? এই দেশে ৭৫ এ ১৫ আগস্ট হত্যার পরে সুশীল সমাজরা কথা বলেনি, তাদের প্রতি ধিক্কার দেই। তারা আজকে বড়-বড় কথা বলে। আজকে সেই সুশীলদের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। আর জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাড়াতে হবে।’
বিএনপির নির্বাচনে আসার প্রসঙ্গে জাহাঙ্গির কবির নানক বলেন, লন্ডনে থেকে নির্দেশ দিয়ে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চান। আসেন না খেলার মনোভাব নিয়ে, আসেন না নির্বাচনে, দেখি বাংলার জনগণ কাকে রায় দেয়। উন্নয়নের পক্ষে রায় দেয় নাকি ধ্বংসের পক্ষে রায় দেয়। মির্জা ফখরুল সাহেবরা আগামী বছর ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারীর নির্বাচনে আসে। আমি জানি আপনারা আসতে পারবেন না। কারণ পলাতক ও দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান দেশে আসতে পারবেন না। সেহেতু মির্জা ফখরুল সাহেব, তারেক রহমান আপনাদের নির্বাচনে আসতে দেবে না। আসেন নির্বাচনে, বাংলার জনগণ শিক্ষা দিয়ে দেবে।
পচাত্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সময়ে নিজেদের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘সেদিন কেন আমরা কার্যকর প্রতিরোধ, প্রতিবাদ গড়ে তুলতে পারলাম না। রাজপথে আন্দোলন করতে পারলাম না, সেই ব্যর্থতা নিয়েও আমাদের কথা বলতে হবে। এই ব্যর্থতার দায় আমাদের নিতে হবে।’
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচন আসলেই সেই পরাজিত শক্তিরা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্যই দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। তাদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। অতীতের মতো এবারও তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য সুলতানা শফির সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহুমুদা বেগম কৃক।
এসএম/এসএন