সরকার জেনে শুনে দেশকে ধ্বংস করছে: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে গড়ে ওঠেনি। ভালো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে আমাদের বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে বড় অবদান আওয়ামী লীগের। স্বাধীনতার পর তারাই ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু তারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তারা মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজও আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
রবিবার (৭ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আবদুস সালাম হলে ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে অবিশ্বাস্য জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মানুষ এমনিতেই হিমশিম খাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি চরম অমানবিক কাজ। এই সরকার ভয়াবহ সরকার। বাংলাদেশে যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল তখনো কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে। দাম বৃদ্ধি করে টাকা সরকারের পকেটে গেছে। ১৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। কার টাকা এগুলো? সাধারণ মানুষের টাকা। শ্রমিকের টাকা। মানুষকে দেয়ালে ঠেকিয়ে দিয়েছে সরকার। জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে সবকিছুর ব্যয় বাড়বে।
তিনি বলেন, ভোলায়, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে বিএনপি ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছিল। কিন্তু সরকার কীভাবে আক্রমণ করেছে। তারা রহিম ও নূরে আলমকে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছে। তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
গত ১৫ বছরে দেশে অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে সরকার। তারা দেশকে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা। খালেদা জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা। অথচ তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ সেই টাকা ব্যাংকেই রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। এসবের অবসান হতে হবে, যোগ করেন তিনি।
বিএনপি মহাসবি বলেন, সরকার জেনে শুনে দেশকে ধ্বংস করছে। আমাদের সময় ইউরিয়ার বস্তা তিন শ টাকায় মিলতো। এখন ১৩ শ টাকার ওপরে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সবকিছুর দাম বাড়িয়েছে। ফলে মানুষ ফসল উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। তারা পেশা পরিবর্তন করছে। যে কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, পেশাজীবীরা রাজনৈতিক সচেতন হবেন। কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে মিশে যাবে সেটা হওয়া উচিত নয়। আজ দেশ সম্পূর্ণ ভয়াবহ সংকটে। ফ্যাসিস্ট সরকার চেপে বসেছে। যাদের কোনো বৈধতা নেই। গোটা বিশ্বকে বোকা বানিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে তারা। ২০০৮ সালে কারচুপির নির্বাচন করেছে। ২০১৪ সালে ভুয়া নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে কি হয়েছে তা সবার জানা ।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সংসদ হলো রাবার স্ট্যাম্প। একজন কথা বলেন আর বাকিরা বলে বেশ বেশ। জনগণকে নির্বাচন বিমুখ করেছে সরকার।’
তিনি বলেন, আমাদের যে আন্দোলন তা শুধু বিএনপির নয়। এখানে সবাইকে সম্পৃক্ত করে দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সব পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসান ও ডা. মো. আবুল কেনানের যৌথ পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন এ্যাবের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শামীমুর রহমান শামীম, ডা. শহীদুল আলম, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী মাহবুব আলম, ড্যাবের ডা. মো. আবদুস সালাম, ডা. এমএ সেলিম, ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. সিরাজুল ইসলাম, ডা. সায়েদুল হক, ডা. পরিমল চন্দ্র, ডা. ফারুক কাশেম, ডা. কামরুল হাসান সরদার, ডা. মো. ফখরুজ্জামান ফখরুল প্রমুখ।
এ ছাড়া ড্যাবের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মো. শামসুল আলম, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন, একরামুল রেজা টিপু ও কবির আহমেদ রিয়াজ, এ্যাবের প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান চুন্নু, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব ও দবির উদ্দিন তুষার সহ শতাধিক চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ড্যাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার ও দেশবাসীর জন্য সুস্থতা কামনায় বিশেষ মুনাজাত করা হয়।
এমএইচ/এমএমএ/