বন্যার্তদের সাহায্য করতে একজন ডাক্তারও নাই: মির্জা ফখরুল
বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য সিলেটে একজন ডাক্তারও নাই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সিলেট জৈন্তাপুর উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ অভিযোগ করেন তিনি।
সরকার শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করে উল্লেখ করে বন্যার্তদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, উন্নয়ন-কিসের উন্নয়ন। মানুষকে সাহায্য করার জন্য এখানে একজন ডাক্তার পর্যন্ত নাই। এখানে যারা ত্রাণ দেয়, সরকারি কোন কর্মকর্তা আছে? নাই।
সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য সরকার কোন কাজ করে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশে শতকরা ৪২ জন মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে। তারা দুবেলা দুমোঠো খেতে পারে না। আজকে এই অবস্থা আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে।
সরকার এখন পদ্মা সেতু নিয়ে ব্যস্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, খালি পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতু। উৎসব, গান-বাজনাসহ বহু কিছু হচ্ছে। এদিকে আমার লোক খেতে পারে না। আমার লোক না খেয়ে আছে। তারা বিনা চিকিৎসার মারা যাচ্ছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা ভেসে যাচ্ছে। সেদিকে এই সরকারের কোন চোখ-কান নেই।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে মাওয়া ঘাটে দিকে শুধু ৯০টা প্রস্রাব খানা তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, এই প্রস্রাব খানাগুলো তৈরি করতে ৯ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এই ৯ কোটি টাকা যদি সিলেটে দিতো তাহলে গরীব মানুষ তো এক বেলা কিংবা দুবেলা খেতে পারতো।
সিলেটের বন্যার্তদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই যে ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যা, গত ১২২ বছরেও এই এলাকায় হয়নি। এই বন্যা আপনাদের ঘর, ধান, গরু ও ছাগলসহ সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমি আপনাদের এলাকায় দেখলাম, একজন মা ও মেয়েও ভেসে গেছেন। চারদিন পরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
সিলেটে একটা করুন অবস্থা চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কেউ এক বেলা খেয়ে আছেন। আবার কেউ খেতে পারছেন না!
বিএনপি এখন বিরোধী দলে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বিএনপির পক্ষে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব নয়। কিন্তু আপনারা আমাদের অন্তরের মধ্যে আছেন। আপনাদেরকে আমরা অন্তর থেকে ভালোবাসি বলেই আমাদের যে সামর্থ্য আছে, সেই সামর্থ্য নিয়ে আপনাদের পাশে দাঁড়ানো চেষ্টা করেছি।
আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই দায়িত্ব তো তাদের (আওয়ামী লীগ)। বন্যার সময় আপনাদের খাবার ও ত্রাণ দেয়ার দায়িত্ব কাদের? আওয়ামী লীগের। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখানে এসেছে? আসে নাই।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী সিলেট এসেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারের করে উড়ে এসেছেন, সার্কিট হাউজে নেমেছেন। তারপরে বড় বড় অফিসার ও এমপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আর ৭ জন মানুষকে নিয়ে গিয়ে লোক দেখানো সাতটা প্যাকেট তুলে দিয়েছেন।
বন্যার্তদের উদ্দেশ্য করে ফখরুল আরো বলেন, হাজার হাজার ও লাখ লাখ মানুষ যেখানে আজকে পানিবন্দী হয়ে গেছে, তাদের ঘর-বাড়ি সব ভেসে গেছে, ব্যবসা ভেসে গেছে, কৃষি কাজ, ধান ও চাল ভেসে গেছে-তাদের জন্য তিনি ( প্রধানমন্ত্রী) কোন ব্যবস্থা করতে যান নাই! আর তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মেয়র আরিফুল হককে জিজ্ঞেস করেছেন, তোমার দল (বিএনপি) কত দিয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনি সিলেটবাসীর জন্য কত টাকা দিয়েছেন? আমরা যেটা পত্র-পত্রিকায় এখন পর্যন্ত দেখেছি, আপনি ৩০ লাখ টাকা দিয়েছেন। কালকে শুনলাম, ৬০ লাখ টাকা দিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, সরকারের এতো বড় বাহিনী। বিশাল বিশাল বাহিনী কাজ করছে। কই সরকারের ইউএনও এবং এমপি সাহেবরা তো আপনাদের কাছে আসে নাই। আমাদেরকে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন, সিলেটের যে অঞ্চলগুলোর মানুষের কাছে এখনো কিছু পৌঁছায়নি, তাদের ব্যবস্থা করে দেন।
ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আজকে এটা কেনো করছে? কারণ জনগণের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নাই। তারা মনে করে জনগণের কোন প্রয়োজন নেই। আর তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই এবং জবাবদিহিতা করতেও হয় না। কারণ তারা বিনা ভোটে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে।
এসময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেয়র আরিফুল হক, বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম জালালী, আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক, সিলেট মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব মিফতা সিদ্দিকী, যুগ্ম আহবায়ক আজমল বকত সাদেক, এমদাদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, বিএনপি নেতা ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ সিদ্দিকী, পাপ্পু সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/