বন্যাকবলিত এলাকাকে ‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষণার দাবি রিজভীর
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হোক। কোনো বিলম্ব ছাড়া এ অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা হোক।
রবিবার (১৯ জুন) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আত্মপ্রচারে নিমগ্ন নিশিরাতের বেপরোয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা আর খামখেয়ালীপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সিলেট জেলার প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভাসছে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলারও ৯০ ভাগের বেশি অঞ্চল। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান গতকাল স্বীকার করেছেন, দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে ১০ জেলার ৬৪টি উপজেলা বন্যাকবলিত। ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা আর হয়নি।
বজ্রপাত, বন্যা ও ভূমিধসে গত দুই দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জ সারাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জেলায় ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের রেলস্টেশন, বিমানবন্দর পানির নিচে। ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বানের পানির নিচে থাকায় সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটে বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ। অন্ধকারে ডুবে আছে। মোমবাতিও মহার্ঘ্য হয়ে উঠেছে। হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটছে সিলেট, সুনামগঞ্জের বানভাসী মানুষের। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঢুকেছে পানি। সেখানে মানুষ আর গবাদিপশু ঠাসাঠাসি করে বাস করছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, খাদ্য নেই, পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। মানুষ হাহাকার করছে।
মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। সেই সঙ্গে টানা বারিপাত।
এ বন্যার আরও কারণ আছে। হাওর ও নদীগুলোতে বাঁধ ও সেতু দেওয়া হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। সেখানে এত দুর্নীতি হয়েছে যে, সব বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে এবং নতুন করে যেসব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে-তা ভেঙে যাচ্ছে। সব কিছু সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য আজকে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে আমাদের দেশে।'
ছাত্রদলের এ সাবেক সভাপতি বলেন, এমন মহা দুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত বিপন্ন তখন নিশিরাতের মাফিয়া সরকার মহাদুর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা। বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকারপ্রধান ভাসছে আনন্দে। প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশি নাচ-গানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কী বিভৎসতা! কী অমানবিকতা!
তিনি বলেন, করোনা মোকাবিলায় যেমন এ গণবিচ্ছিন্ন সরকার একবারেই ব্যর্থ, চরম উদাসীনতা, অবহেলা ও দুর্নীতিতে গোটা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল, ঠিক তেমনি এ ভয়াবহ বন্যা নিয়েও সরকারের নির্লিপ্ততা, নিষ্ক্রিয়তা, মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। প্রতিটি দুর্যোগের সময়ে, জনগণের কষ্টের সময়ে, সরকার ব্যস্ত হয়ে যায় উৎসব নিয়ে আনন্দে। করোনায় যখন মানুষের জীবন-মরণ লড়াই চলছিল তখন জন্মশত বার্ষিকীর উৎসবে মত্ত ছিল তারা।
তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব আমোদ উল্লাস করতে হবে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। যারা উৎসবে অংশ নিতে অনীহা দেখাবে তাদের চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। দুই প্রান্তে থানা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।
রিজভী বলেন, আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এ লোক দেখানো ভোজবাজী বন্ধ করুন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন উৎসবের নামে শত শত কোটি টাকা উড়ানো হচ্ছে।
এসএন