পদ্মা সেতুর সার্কাস চলছে: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'আমরা অনেক সার্কাস দেখেছি, বা শুনেছি। আমাদের দেশেও অনেক রকম সার্কাস আছে। এখন একটা সার্কাস চলছে-সেটা হল পদ্মা সেতুর সার্কাস। কি ঘটছে, সরকারের কাছ থেকে কত কথা।'
তিনি বলেন, 'পদ্মা নদীর উপরে একটা সেতু তো আগেই হয়েছে। তার নাম লালন সেতু, এই সেতু খালেদা জিয়ার আমলে হয়েছে কই তখন তো আমরা এতো হইচই করি নাই। আর তারা রেড অ্যালার্ট জারি করার মত অবস্থা করেছে। তাদের নেতা-কর্মীদেরকে সতর্ক থাকতে বলেছে। অথচ শেখ হাসিনা কি জানে? সম্প্রতি এই বাজেটের কারণে এদেশের মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ আধাবেলা খায়, আধাবেলা না খেয়ে থাকে। মনে করেছে পদ্মা সেতু দেখলে সবকিছু ভুলে যাবে। শিক্ষিত বেকারত্বের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচাইতে বেশি বাংলাদেশে। এটা শুধু করোনার কারনে হয় নাই । তার আগে থেকেই এই ভয়ংকর বেকারত্ব।'
মঙ্গলবার ১৪ জুন নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় জিয়া পরিষদের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি ও সুস্থতা কামনায় এক দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, 'সারাদেশের জনগণের যিনি সমর্থন ধন্য ছিলেন, যার হাতে এখন শাসনব্যবস্থা থাকার কথা তাকে বন্দি করেছে। বন্দী করেছে কারা? যারা অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায়ন আছে তারা। নিশি রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আছে। সকল অন্যায় অবৈধ পন্থায় যারা ক্ষমতায় আছে তারা। অর্থাৎ সাধারণ জনগণ সমর্থন ধন্য নেত্রী, সুষ্ঠু ভোট হলে তিনি ক্ষমতায় থাকতেন তিনি বন্দী। আর যারা অন্যায় অবিচার রাতের ভোট দিনে করেছে, গুম খুন এমন কোন অবৈধ পন্থা নাই যে তারা ব্যবহার করে নাই এমন একজন নেত্রীর নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় তারা নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'দস্যুরা কাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে? সমাজের ভদ্র মানুষের সন্তানদেরকে ধরে নিয়ে যায় তারপরে তাদের বাবা-মার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। শেখ হাসিনা তাই করছেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী, দস্যুরা যেভাবে মুক্তিপণ আদায় করে শেখ হাসিনা সেই ভাবে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে দেশের সকল জনগণকে জিম্মি করে অবৈধ ভোট করছে ক্ষমতায় থেকে।'
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বলেন, 'শেখ হাসিনা আপনি কি এটা জানেন? আপনার আত্মীয়-স্বজন নেতা-কর্মীরা প্রতিবছর হাজার লক্ষ কোটি টাকার বিদেশে পাচার করছে। এই কারণেই মুদ্রাস্ফীতি। আপনি কিন্তু প্রকারান্তরে সেটা স্বীকার করেছেন। আপনি বলেছেন টাকা যদি ফেরত নিয়ে এসে বিনিয়োগ করা হয় তাহলে তাকে ধরা হবে না। অথচ বিএনপি লোক কবরে থাকলে মামলা হয়। হজ্জে থাকলেও মামলা হয়। তারা টাকা পাচার করবে আর আপনি ধরবেন না এটা হয় না। সুতরাং আপনার লোকই টাকা পাচার করেছে বলেই আপনি এই ঘোষণা দিয়েছেন। এর থেকে আপনি মুখ লুকাবেন কোথায়?'
তিনি বলেন, টাকা পাচার, দুর্বৃত্তায়নের কারণে মূল্যস্ফীতি এই কারনেই মাধ্যম ও স্বল্প আয়ের মানুষদের জীবন যাপন করা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা চোখে অন্ধকার দেখছে। ওই অন্ধকার ভেদ করে আপনার পদ্মা সেতু দেখবে কি করে? কারণ তার পেটে যে খোদা, তার চোখে যে অন্ধকার গোলক ধাঁধা, এই গোলকধাঁধা ভেদ করে আপনার পদ্মা সেতুতে হাজার ভোল্টের বাল্ভ লাগলেও তা তারা দেখতে পাবে না।
এই সরকার সকল সরকারি অফিস গুলোকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি আগেও বলেছিলাম এই নির্বাচন কমিশন হচ্ছে আওয়ামী লীগের কিচেন কমিশন। এটা আবার প্রমাণিত হলো এরা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মতো কাজ করছে। এই কারণেই আওয়ামী লীগের অধীনে সকল নির্বাচন বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে।
'কুমিল্লার সিটি নির্বাচন বিএনপি প্রত্যাখ্যান করেছে। ওই এলাকার একজন সংসদ সদস্য নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছে। সেটা নিয়ে অভিযোগ জানালে নির্বাচন কমিশন বলেছে একজন সম্মানিত ব্যক্তি কে কি টেনে হিঁচড়ে বের করা যায়। এতেই বোঝা যায় এই নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার একেবারে রান্নাঘরের কমিশন। আওয়ামী লীগ ভোট ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই করবে আর নির্বাচন কমিশন পাহারা দিবে সেই দায়িত্ব নিয়েছে তারা। এই কারণেই বিএনপি আওয়ামী লীগের অধীনে সকল নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। কারণ শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।'
রিজভী বলেন, 'খালেদা জিয়া কত দুর্যোগ মোকাবেলা করে আজীবন জনগণের পাশে রয়েছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনা মুচলেকা দিয়ে বিদেশে চলে গিয়ে ছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়া যায়নি, এদেশের জনগণের জন্য। এটা তার বৈশিষ্ট্য ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে অতিক্রম করে খালেদা জিয়া কখনো নতজানু হননি।'
'খালেদা জিয়া এক ভয়ঙ্কর অসুস্থতার মধ্য দিয়ে দিন অতিক্রম করছেন। অথচ হাজী সেলিমের মত একজন সংসদ সদস্য যার সাজা হয়েছে তিনি যান বিদেশে চিকিৎসা নিতে। আর একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার ঘোষকের সহধর্মিনী তিনি চিকিৎসার অভাবে ধুকছেন। আমরা আল্লাহর কাছে তার সুস্থতা কামনা করছি।'
এমএইচ/