প্রতিক্রিয়া/ বাস্তবতা বর্জিত বাজেট: মঈন খান
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, এক কথায় বলতে হয়, এই বাজেট জনগণের জন্য নয়। এবারের বাজেট বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ একটি বাস্তবতা বর্জিত বাজেট, কেবলমাত্র সরকারের আশীর্বাদপুষ্টদের জন্যই করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, বাজেটের আকার বেড়েছে সন্দেহ নেই, কিন্ত এই ঢাউস বাজেটের যে দিকটি সরাসরি দেখা যায় না সেটা হচ্ছে অবাধ মুদ্রা সরবরাহের বিষয়টি। কেউ জানে না বাংলাদেশ ব্যাংক কত নতুন নতুন নোট ছাপিয়ে বাজার সয়লাব করে দিচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর অর্থনীতিতে জনগণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ইনফ্লেশন সরকারি হিসাবে ৬ শতাংশের কিছু ওপরে কিন্তু বাস্তবে সেটা ১২ শতাংশ, অর্থাৎ সরকারি হিসাবের দ্বিগুণ। বর্তমান বছরের বাজেটের ফলে এই পরিস্থিতি আরও নাজুক আকার ধারণ করবে।
তিনি বলেন, ডলারের বিপরীতে স্বল্পতম সময়ে টাকার মারাত্মক অবমূল্যায়ন ও দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। এই বাজেটে এর কোনো সমাধান নেই।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, দরিদ্র দেশের একটি বাজেটের মৌলিক দিক হলো উন্নয়ন বাজেট বনাম রাজস্ব বাজেটের অনুপাত। আমরা দেখছি, একদিকে উন্নয়ন বাজেটের সিংহভাগ নিয়েছে ভৌত অবকাঠামোর মেগা প্রজেক্টগুলো। সাথে সাথে আশঙ্কা হচ্ছে মেগা দুর্নীতির। কাজেই অধিকতর ব্যাখ্যায় না যাওয়াই হয়তো উত্তম। পাশাপাশি অনুন্নয়ন ব্যয় যাকে পরিচালনা ব্যয় বলা হয়, এর পরিমাণ ৪ লাখ কোটির ওপর। রাজনৈতিক সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রশাসন ও সাপোর্ট সিস্টেমকে খুশি রাখতে হবে তো!
তিনি বলেন, বাজেট ঘাটতি বিষয়টি ৩৬ শতাংশ, অর্থাৎ এক তৃতীয়াংশেরও বেশি। ফলে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধের বিষয়টি নাই বা ব্যখ্যা করলাম। এর চাপও কিন্তু দরিদ্র জনগণের ওপরেই পড়বে। নতুন ট্যাক্স আরোপের বিষয়টি লক্ষ্য করুন। কর্পোরেট ট্যাক্স কমেছে, কিন্ত ট্যাক্স ফ্রি তিন লাখ টাকার সীমা এক টাকাও বাড়েনি।
মঈন খান বলেন, বাজেটে বিরাট অংকের ভর্তুকি লাখ কোটি টাকা। প্রশ্ন হচ্ছে, এগুলো কার পকেটে যায়? আমরা অতীতে দেখেছি, কীভাবে একই টেলিফোন নম্বরে কতবার প্রণোদনা যায়, কার কাছে যায়। এগুলো এখন মানুষের কাছে দিবালোকের মত স্পষ্ট। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসবে, বিগত দুই বছরে যে লাখ হাজার কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল সেই টাকা কোথায় গেল? এর মধ্যে একটি টাকাও কী পরিশোধ করা হয়েছে? জনগণ জানতে চায়। শুনি, রপ্তানি নাকি হু হু করে বাড়ছে। তাহলে প্রণোদনার টাকা পরিশোধ হচ্ছে না কেন? কারা কারা এই প্রণোদনা পেয়েছে ও কী পরিমাণ পরিশোধ করেছে, এর ওপরে সরকারের শ্বেতপত্র চায় জনগণ।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বহীন এই সরকার দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের কোভিড পরবর্তী চরম মূল্যস্ফীতিজনিত দুঃসহ জীবনযাপন ও দৈনন্দিন সংগ্রামের বিষয়টি সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে এমন একটি বাজেট উপস্থাপন করেছে যা দেশের মুষ্টিমেয় ধনি শ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় তৎপর হয়েছে। অবাক হওয়ার কিছু নেই, এতে করে লাভবান হবে সরকার সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষ গোষ্ঠী। অন্যদিকে নতুন বাজেটের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরও চরম অবস্থায় পতিত হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
এমএইচ/এসজি/