ইলিয়াস আলীর পরিবার অনেক বিপদে আছে: ফখরুল
গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর পরিবার বর্তমানে ‘অনেক বিপদে’ দিনযাপন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে বনানীর বাসায় ইলিয়াস আলীর বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সঙ্গে দেখা করার পরে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘ইলিয়াস আলীর পরিবার অনেক বিপদে আছেন। তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল কিছুক্ষণ আগে। তিনি বললেন তার (ইলিয়াস আলী) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সেটা তারা হ্যান্ডেল করতে পারছেন না। তার গাড়িরও ট্যাক্স তারা দিতে পারছেন না।’
‘এই বিষয়গুলো তার পরিবারের কাছে একটা মর্মান্তিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মেয়ের ভর্তির ব্যাপারে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সব কলেজে মেয়েকে ভর্তি করছিল না। পরে অনেক চেষ্টা-তদবির করে তার মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে।’
এটা শুধু ইলিয়াস আলীর পরিবার নয়, গুম হওয়া সব পরিবারগুলো এমন নিদারুণ কষ্টের মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
২০১২ সালে ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস আলীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে লোকজন তুলে নিয়ে যায় বনানীর বাসার কাছে আমতলী থেকে। তার স্ত্রী তাহসিনা রশদীর লুনা, এক ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস এবং এক মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে নিয়ে বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় যান। তিনি সেখানে তার সহধর্মিনী তাহসিনা রুশদীর লুনার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সিলেট জেলা সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি মহাসচিব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে পরিবারের জন্য ঈদ উপহার তাহসিনা রুশদীর কাছে পৌঁছে দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা গুম হওয়া পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছি। বিভিন্ন জেলাগুলোতে যারা ভিকটিম আছেন তাদের জেলা পর্যায়ের নেতারা এই ঈদ উপহার ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন।’
জবাবদিহি না আসলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হবে না মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সম্প্রতি দুই জন ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। এটা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চার মাস পরে। এটার কারণটা হচ্ছে, আমি যেটা মনে করি যে, র্যাবের যে ক্যারেক্টার তারা তৈরি করে দিয়েছে, সেই ক্যারেক্টারে অনুযায়ী র্যাব বেআইনি, মানবাধিকার লঙ্ঘন করে কাজ করছে এবং করে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্য়ন্ত তারা (সরকার) ব্যবস্থা না নেবে, যাদের দায়ী করা হয়েছে, যারা ওই কাজে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। তারজন্য স্বাভাবিকভাবে এসব (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) হবে। এর একমাত্র কারণ এখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমরা বার বার এ কথা বলেছি যে, সরকারের বড় সমস্যা হচ্ছে যে, তাদের যেহেতু জবাবদিহিতা জনগণের কাছে নেই, অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরও সেই জবাবদিহিতার থাকার প্রয়োজন তারা মনে করে না।’
ইলিয়াস আলীর সন্ধানে সরকারের প্রচেষ্টা নেই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধানে সরকারের কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যায় না। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার বিষয়ে কোনো প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। যেহেতু সরকারই ইনভলবড। যখন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে তখন তো মানুষজন দেখেছে যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। যারা দেখেছেন তারাও গুম হয়েছে, তার গাড়ির চালকও গুম হয়েছে।’
‘খুব পরিষ্কার যে, এই সরকারের দ্বারাই এটা হয়েছে সেই কারণে তারা উদ্যোগ নেয় না…।’
গুম হওয়ার বিষয়ে দেশের একটি প্রতিষ্ঠান র্যাব ও তার ৭ কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ তুলে নিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতের কাছে যে সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার ও আওয়ামী লীগ একটা ব্যানক্রাফট হয়ে গেছে যে, তারা জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে চায়। ভারতকে বলবে যে, তাদের দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করাবে। বিষয়টা হচ্ছে যে, এই সরকারের সেই মুভ নেই, তারা এটা নিয়ে মানুষের কাছে দাঁড়াতে পারছে না।’
‘অন্যদিকে তারা তো ক্ষমতায় জোর করে বসে আছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এইসব বাহিনীকে ব্যবহার করছে। এইভাবে ব্যবহার করার পরে তাদের বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা নেবে, তাদের শাস্তি দেবে, তাদের বের করে দেবে অথবা তাদের আইনের আওতায় আনবে এটা তারা করতে পারছে না। সেজন্য সেদিকে না গিয়ে যেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ওইসবের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা উঠানোর সম্ভাবনা নেই। যেহেতু সরকার গুম করে, খুন করে নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে আছে, তাদের নিয়ে এ সব অপকর্ম করছে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তারা (সরকার) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।’
গুম থেকে ফেরত আসা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আপনারা জানেন যে, তিনি ওখানে (ভারত) নিম্ন আদালতে মুক্ত হয়েছিলেন। পরে আবার উচ্চ আদালতে আপিল করে তাকে আটকিয়ে রাখা হয়েছে।’
এমএইচ/আরএ/