সিইসি হলেন সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার কমিশনার নিয়োগ দেন। এর মধ্য দিয়ে গঠিত হলো নতুন নির্বাচন কমিশন।
চারজন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা হলেন-অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এবং সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এর সঙ্গে সাক্ষাত করে চূড়ান্ত দশ জনের তালিকা জমা দেয় অনুসন্ধান কমিটি।
আরও পড়ুন: সিইসি ও ইসি হতে পারেন যারা
সেই দশজন থেকে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এবারই প্রথম আইন অনুযায়ী ইসি গঠন হলো।
গত ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর ইসি গঠনে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর পাঁচ সদস্য হলেন হাইকোর্টের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন ও কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।
এই কমিটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম দেওয়ার অনুরোধ করেছিল। ব্যক্তিপর্যায়েও নাম আহ্বান করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে কমিটি। এরপরও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকে আরও কিছু নামের প্রস্তাব আসে। সব নাম কাটছাঁট করে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে অনুসন্ধান কমিটি। চূড়ান্ত তালিকা হতে সিইসি পদে সাবেক এক সচিবই আসছেন এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দক্ষতার সঙ্গে ধর্ম, আইন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে প্রথমে সংসদ সচিবালয়ের সচিব হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে যোগ দেননি। পরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যোগ দেন। ২০১৬ সালে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসরে যান। কাজী হাবিবুল আউয়ালের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে।
উল্লেখ্য এর আগে ‘সিইসি ও ইসি হতে পারেন যারা’-শিরোনামে ঢাকাপ্রকাশ খবর প্রকাশ করে।
সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত:
কাজী হাবিবুল আউয়াল মুন্সেফ হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর নানা পদ পেরিয়ে সচিব হিসেবে অবসর নেওয়ার পর এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলেন। ৬৬ বছর বয়সী হাবিবুল আউয়াল পাঁচ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন। এরপর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে আইন বিভাগে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। হাবিবুল আউয়ালের পৈত্রিক ভিটা চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দীপে হলেও তার জন্ম কুমিল্লায়, বাবার চাকরি সূত্রে। হাবিবুল আউয়ালের বাবা কাজী আবদুল আউয়াল কারা বিভাগের কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বাদী ছিলেন তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) আবদুল আউয়াল। হাবিবুল আউয়াল ১৯৭২ সালে খুলনার সেন্ট জোসেফ’স হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি শুরু করেন মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে। ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান।
কাজী হাবিবুল আউয়াল ২০০০ সালের ডিসেম্বরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হন হাবিবুল আউয়াল। ২০০৪ সালে হন অতিরিক্ত সচিব। ২০০৭ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন তিনি। সচিব হওয়ার পর ২০০৯ সালে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়েই ছিলেন হাবিবুল আউয়াল। বিচার বিভাগের এই কর্মকর্তার আইন সচিব হিসেবে নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে ২০১০ সালে রায় দেয় আদালত। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগের সময় নীতিমালা মানা না হওয়ায় আদালত তার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে। আইন সচিব থাকা অবস্থায় বিধিবহির্ভূতভাবে দুই বিচারককে অবসরে পাঠানো নিয়েও জটিলতায় জড়িয়েছিলেন হাবিবুল আউয়াল। সংসদীয় কমিটি এজন্য তাকে তলব করলে তিনি ওই ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে ক্ষমাও চান। ওই সব ঘটনার পর ২০১০ সালে এপ্রিলে ধর্ম সচিব করা হয় হাবিবুল আউয়ালকে। পরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব করা হয়। ২০১৪ সালে সেখান থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব করে পাঠানো হয় তাকে। ওই বছরই পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন তিনি। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল হাবিবুল আউয়ালের। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে তাকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১৬ সালে আরও এক বছর বাড়ানো হয় চুক্তির মেয়াদ। এরপর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেই জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসরে যান তিনি। তিন মেয়ের জনক হাবিবুল আউয়ালের স্ত্রীর নাম সাহানা আক্তার খানম।
এসএম/