তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার সুপারিশ
বাংলাদেশের পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে স্মোকিং জোন, বিক্রয়স্থলে তামাকপণ্য প্রদর্শন এবং তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হয়নি। এরফলে আইনটি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে যথেষ্ট শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাই আইনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে সর্বোত্তম কাতারে নিতে এটি সংশোধন করে যুগোপযোগী এবং শক্তিশালী করা অতীব জরুরি।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ (সিটিএফকে) এর সহায়তায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’র আইন বিভাগের এক গবেষণায় এই ফলাফল উঠে এসেছে। টোবাকো কন্ট্রোল লজ ই বাংলাদেশ: অ্যানালাইসিস অব গ্যাপস এন্ড প্রপোজড রিফার্মস শীর্ষক গবেষণার ফলাফল মঙ্গলবার (০৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে প্রকাশ করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ. ফ. ম. রুহুল হক এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্বস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) কাজী জেবুন্নেছা বেগম, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্ (সিটিএফকে) এর সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের রিজিওনাল ডিরেক্টর বন্দনা শাহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. গণেশ চন্দ্র সাহা।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল এর প্রেসিডেন্ট ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
গবেষণায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করতে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো হচ্ছে, সকল পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ রাখার বিধান বিলুপ্ত করা; বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রমসহ সব ধরনের পৃষ্টপোষকতা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা; সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করে ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ নির্ধারণসহ তামাকপণ্য মোড়কজাতকরণে কঠোর বিধিনিষেধ (প্লেইন প্যাকেজিং) আরোপ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা এবং প্যাকেটবিহীন জর্দা-গুল বিক্রয় নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্টস (এইচটিপি) ও নিকোটিন পাউচসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করা।
এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা থেকে সিগারেটকে বাদ দেয়া, তামাকপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে জড়িত ব্যক্তির বয়স ১৮ থেকে বৃদ্ধি করে ২১ বছর নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয় নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়।
ডা. আ. ফ. ম. রুহুল হক বলেন, এই গবেষণার ফলাফল নীতি-নির্ধারকদেরকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। কাজী জেবুন্নেছা বেগম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রন আইনটি সংশোধন করে যুগপোযোগী করা অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।