এবার থানায় মুরাদের বিরুদ্ধে ঢাবি শিক্ষার্থীর অভিযোগ
ছবি : সংগৃহীত
সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে এবার বিকৃত যৌনাচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) তিনি শাহবাগ থানায় এ অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগ দায়েরর বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার আতিকুর রহমান। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলিয়াস সিজার তালুকদার নামে এক শিক্ষার্থী মুরাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, যা পরে নথিভুক্ত করা হয়।
ওই শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, একটি ফেসবুক লাইভ অনুষ্ঠানে গত ৫ ডিসেম্বর তিনি মুরাদ হোসেনের বিকৃত যৌনাচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেখতে পান। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বাজে মন্তব্যের অভিযোগও তোলেন ওই শিক্ষার্থী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থী জুলিয়াস সিজার তালুকদার (২৫) তার অভিযোগে বলেন,‘সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান কর্তৃক ‘Nahidrains Pictures’ নামক ফেসবুক পেইজে বিকৃত যৌনাচার ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্রাব করার সময় ও আমার নাই।' এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে দেশের সর্ব প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ কে সে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাচ্ছিল্য করেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর রােকেয়া হল এবং শামসুন্নাহার হলের নারী শিক্ষার্থীদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে বলে 'তারা রাতে নিজের হলে অবস্থান না করে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হােটেলে গিয়ে রাত্রি যাপন করে।' এই বাক্য দ্বারা সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদেরকে চরিত্র হননের অপচেষ্টা করেছে।'
অভিযোগে বলা হয়, আমরা মনে করি যে কোন বিদ্যাপীঠই পবিত্র স্থান এবং একজন নাগরিকের চারিত্রিক বিষয়ে মন্তব্য করার ক্ষেত্রে একটি সীমারেখা রক্ষা করা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। তাই উক্ত দু'টো মন্তব্যের মাধ্যমে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয় বরং বিদ্যাপীঠসমূহের প্রতি তীব্র অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘৃণার রাজনীতি করার অপপ্রয়াস দেখিয়েছেন।
অন্যদিকে নারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমূলক বক্তব্য দিয়ে তাদের চরিত্র হননের অপচেষ্টা করে নারীর রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের বিরােধিতা প্রকাশ করেন। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আপামর শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নাগরিক ও রাজনৈতিক মূল্যবােধ বিরােধী এই ন্যাক্কারজনক বক্তব্যে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে শ্লীলতাহানিসহ কুরুচিপূর্ণ ভাষায় কথা বলে এবং সামাজিক ভাবে মানক্ষুন্ন করেছে।'
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সদ্য পদত্যাগ করা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে বলে এদিন দুপুরে জানিয়েছিলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, গত রাতে চিত্রনায়ক ইমন ডিবি কার্যালয়ে আসেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার মোবাইল থেকে এ অডিও ফাঁস হয়েছে কি না-তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি ডা. মুরাদ হাসানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হবে। প্রয়োজনে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকেও ডাকা হতে পারে।
সম্প্রতি দেশে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাহাত্তরের সংবিধান পুনপ্রবর্তন ও সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দেওয়ার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন। এরপর তার ‘নারী বিদ্বেষী’ বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্রনায়ক ইমনের সঙ্গে ফোনালাপ। ফাঁস হওয়া ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে হোটেলে তার কক্ষে যাওয়ার কথা বলেন। তিনি ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তুলে আনারও হুমকি দেন। তার কণ্ঠে ‘অশ্লীল’ কিছু শব্দ উচ্চারিত হয়।
ফোনালাপে থাকা চিত্রনায়ক ইমন ইতিমধ্যে সেটি স্বীকারও করেছেন।
ডা. মুরাদ হাসান শনিবার (৪ ডিসেম্বর) একটি টেলিভিশনের টকশোতে অংশ নিয়ে অপর আলোচক বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়াকে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি নিজে একজন ‘চিকিৎসক হিসেবে’ পাপিয়ার 'চিকিৎসা দরকার' বলেও মন্তব্য করেন।
এর দুদিন আগে অনলাইনে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার পরিবারের এক নারী সদস্যকে উদ্দেশ্য করে অশালীন বক্তব্য দেন ডা. মুরাদ হাসান। এ সময় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করেন।
এই দুই ঘটনার পর ডা. মুরাদ হাসানের বহিস্কার চেয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি ওঠে।
ডা. মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য। পেশায় চিকিৎসক এই রাজনীতিক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।
এনএইচ/এপি/এমএমএ/