ঢাকা-টোকিও কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর
বাংলাদেশ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার বন্ধন জোরদার করার অঙ্গীকার করেছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পৃথক শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তায় এ অঙ্গীকার করেন।
মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর এ ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। ঢাকার জাপান দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাপান-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী লিগের সভাপতি তারো আসের বাণীও পাঠ করা হয় অনুষ্ঠানে।
ভিডিও বার্তায় উভয় প্রধানমন্ত্রী এই গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি জাপান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জাপান ও এর জনগণের মূল্যবান সমর্থন ও অবদানের জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপানে ঐতিহাসিক সফরের কথা তুলে ধরেন, যা দুই দেশের মধ্যে একটি অটল ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ১৯৯৭, ২০১০, ২০১৪, ২০১৬, এবং ২০১৯ সালে সালে জাপান সফরে তার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তির কথা উল্লেখ করেছেন, যা অদূর ভবিষ্যতে ‘ব্যাপক অংশীদারিত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব’-এ উন্নীত হতে চলেছে। তিনি জাপানের টেকসই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা স্বীকার করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে বিগত ৫০ বছরের ঈর্ষণীয় সহযোগিতা আগামী ৫০ বছরের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা তার বাণীতে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে জাপানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাপান সফরকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে শক্ত ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাপানের অব্যাহত সহায়তার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ.কে. আবদুল মোমেন মুক্তিযুদ্ধে জাপান সরকার ও জনগণের দেওয়া নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থনকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। তিনি জাপানের ‘বাংলাদেশের বন্ধুদের’ প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান, যাদেরকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অমূল্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ ভূষিত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জাপান সফরের কথাও তুলে ধরেন, যা দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার জন্য জাপানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক আত্মীয়তার কথা তুলে ধরে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালে জাপান সফরে দুই বন্ধুপ্রতীম দেশের মধ্যে সম্পর্ক অনন্তকালের জন্য বন্ধু হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এ প্রয়াসে মূল উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে জাপানের সহায়ক ভূমিকার ওপর জোর দেন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী বহুমুখী সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন, বিশেষ করে অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাপানের অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সৌজন্যে বর্ণাঢ্য নৃত্য পরিবেশনও করা হয়।
বিডা, বেপজা, বেজা-এর চেয়ারম্যানগণ এবং বাংলাদেশে জাপানি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আরইউ/এএস