ট্রান্সকম শেয়ার জালিয়াতি: সিমিন রহমানসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন
সিমিন রহমান ও শাযরেহ হক। ছবি: সংগৃহীত
ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার জালিয়াতির ঘটনায় ভুয়া নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করে শেয়ার ট্রান্সফারের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) অফিস এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা উঠে এসেছে। মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে ট্রান্সকম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান এবং আরও চার কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার তদন্তে দেখা গেছে, ২০২০ সালে তৈরি করা শেয়ার ট্রান্সফারের দলিল দুটি ভুয়া নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই স্ট্যাম্পগুলোতে ট্রান্সকমের প্রতিষ্ঠাতা লতিফুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শাযরেহ হকের ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়। তবে আদালতে জমা দেওয়া ডাক বিভাগের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্ট্যাম্প দুটি ২০২৩ সালে তৈরি করা হয়েছে, যা অভিযোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
শাযরেহ হক গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন, তার বড় বোন সিমিন রহমান ও অন্যান্য অভিযুক্তরা জালিয়াতির মাধ্যমে ট্রান্সকমের ২৩,৬০০ শেয়ার নিজেদের নামে হস্তান্তর করেন। শাযরেহ দাবি করেন, তার পিতা লতিফুর রহমান জীবদ্দশায় এসব শেয়ারের মালিক ছিলেন এবং মৃত্যুর পর সেগুলো মুসলিম শরিয়া আইনে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টনের কথা ছিল।
ঢাকা জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভেন্ডর থেকে স্ট্যাম্প সরবরাহের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেই ভেন্ডরের লাইসেন্স ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাতিল করা হয় এবং ওই বছর কোনো স্ট্যাম্প ইস্যু হয়নি। একই সঙ্গে, ডাক বিভাগের সহকারী নিয়ন্ত্রক (স্ট্যাম্প) শুভ্র সূত্রধরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ট্যাম্প দুটি ২০২৩ সালের মে মাসে ইস্যু করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন করলেও আদালত তা মঞ্জুর করেননি। আদালত বলেন, যেহেতু স্ট্যাম্প দুটি ভুয়া প্রমাণিত, তাই ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন নেই।
সিমিন রহমানের আইনজীবী সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া জানান, মামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন, কারণ স্ট্যাম্পগুলো ২০২৩ সালের এবং তা ২০২০ সালে ব্যবহৃত হতে পারে না। তিনি আরও দাবি করেন, মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, স্ট্যাম্প ও কাগজপত্র জালিয়াতির ঘটনা শুধু আদালতের মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব। শেয়ার ট্রান্সফার সংক্রান্ত দলিলে এমন অনিয়ম কর্পোরেট শৃঙ্খলার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করা হবে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।