এস আলম পরিবারের ৩৫০ ব্যাংক হিসাবের সন্ধান
এস আলম পরিবারের ৩৫০ ব্যাংক হিসাবের সন্ধান। ছবি: সংগৃহীত
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। এসব অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত এই টাস্কফোর্সে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১১টি সংস্থার প্রতিনিধি। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স বেশ কয়েকটি বড় অর্থ পাচার চক্রকে চিহ্নিত করেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) তথ্যমতে, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বছরে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ পাচার হয়েছে। এতে মোট পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের মতে, ব্যাংক খাত থেকে পাচার হয়েছে ১৬.৭ বিলিয়ন ডলার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত টাস্কফোর্স এই পাচার ঠেকাতে এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে কাজ করছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপসহ বেশ কিছু নামকরা শিল্পগোষ্ঠী এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মতো ব্যক্তিদের অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
টাস্কফোর্সের তদন্তে জানা গেছে, এস আলম পরিবারের সদস্যদের নামে ৩৫০টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে, যেখানে বিপুল অঙ্কের লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া, তারা সিঙ্গাপুরে হোটেল ও পর্যটন খাতে বিশাল বিনিয়োগ করেছে।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি অন্তর্ভুক্ত:
- পাচার হওয়া অর্থ চিহ্নিত করা ও তদন্তে সহযোগিতা।
- বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থ ফেরত আনা।
- সংশ্লিষ্ট মামলার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
- পাচার ঠেকাতে নতুন আইনি কাঠামো ও নীতি প্রণয়ন।
বেক্সিমকোর মালিক সালমান এফ রহমান, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার নামে-বেনামে যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। সিঙ্গাপুরে এস আলম পরিবারের হোটেল ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগের তথ্যও সংগ্রহ করেছে টাস্কফোর্স।
অর্থ ফেরানোর প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। তবে সুনির্দিষ্ট নথিপত্র ও আন্তর্জাতিক সমঝোতার ভিত্তিতে এটি সম্ভব। এর আগে ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ৯৩০ কোটি ডলার ফেরত আনার উদাহরণ রয়েছে।
টাস্কফোর্স বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইডি, এনবিআর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সহযোগিতায় পাচার রোধে কাজ করছে। তবে আগের সরকারগুলো এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ হলেও দেশে ফেরত আনা গেলে এটি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় সাফল্য হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।