আবরারের স্মৃতি আঁকড়ে একাকী দিন কাটছে মায়ের
ছবি: সংগৃহীত
প্রয়াত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ব্যবহৃত হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, নামাজের টুপি, তসবিহ, ব্রাশ, না খাওয়া চকলেট, জুতা, জামাকাপড়, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড-সবকিছু স্বযত্নে রেখে দিয়েছেন তার মা রোকেয়া খাতুন। আলমারিতে সযত্নে রাখা রয়েছে আবরারের অর্জিত পুরষ্কারগুলোও। শেষবার কিনে দেওয়া নতুন জামাটিও অক্ষত রয়েছে মায়ের সংগ্রহশালায়।
কুষ্টিয়ায় পারিবারিক বাড়ির ছোট একটি কক্ষ, যা আবরারের থাকার জন্য নির্ধারিত ছিল, সেই কক্ষেই সাজানো রয়েছে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও বইগুলো। একাকী দিন কাটে মায়ের, ছেলের স্মৃতির সঙ্গেই কথা বলেন তিনি।
রোকেয়া খাতুন বলেন, “এই মোবাইলটাই ছিল ওর জীবনের কাল। যদি জানতাম যে মোবাইলের ফেসবুক পোস্ট ওর জীবন কেড়ে নেবে, তাহলে কখনোই মোবাইল কিনে দিতাম না।”
আবরারের বাবা ঢাকায় ব্র্যাকের নিরীক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকেন, মূলত ছোট ছেলে ফায়াজের পড়াশোনার জন্য ঢাকায় তার পোস্টিং। কুষ্টিয়ার বাড়িতে একাই থাকেন রোকেয়া খাতুন। ছেলের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “সেদিন ছিলো ৬ তারিখ, রবিবার। ঠিক পাঁচ বছর পরেও আজকের দিনটিও রবিবার এবং ৬ তারিখ। সেদিন আমার ছেলেকে বাসে তুলে দিয়েছিলাম। বারবার ফোন দিয়ে বলছিলো দেরি হচ্ছে। হয়তো এটাই ছিলো ওর শেষ যাত্রা।”
তিনি আরও বলেন, “কেউ সেদিন আমার ছেলেকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি। ওদের হাতে আমার ছেলেকে শিবির বলে মেরে ফেলা হলো। পাঁচ বছর পরেও আমি কিছুই ভুলতে পারিনি।”
আবরারের মা চান, দ্রুত মামলার রায় কার্যকর করা হোক এবং পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “জেলে থাকা খুনিরা পালিয়ে যাবে কি না, এই ভয়ও আমাকে তাড়া করে।”
আবরার ফাহাদের হত্যার ঘটনায় দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে সহপাঠীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন আবরার। তার বাবা বরকতউল্লাহ ওই বছরের ১৩ নভেম্বর চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার রায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ জন শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। মামলাটি বর্তমানে উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্স শুনানির অপেক্ষায় আছে।
আবরারের মা দেশপ্রেমিক ছেলের স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন, তার মৃত্যুর বিচারের আশায় অপেক্ষায় রয়েছেন।