চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। এ জেলায় চলছে মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ, যা রোজাদারদের জন্য আরও কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আপাতত বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্র জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যেখানে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল মাত্র ১৮%। কেন্দ্রের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গতকাল ছিল মৃদু তাপপ্রবাহ, যা আজ থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আগামী কয়েকদিন এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে, তারপর কিছুটা কমতে পারে।
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই প্রচণ্ড রোদ শুরু হয়, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও তীব্র হয়ে ওঠে। দুপুরের পর গরম অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়, ফলে বাইরে বের হওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত এই তাপদাহ অব্যাহত থাকে।
চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ভুগছেন খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালক ও কৃষকরা। প্রচণ্ড রোদে মাঠে কাজ করতে পারছেন না কৃষকেরা, আবার রাস্তায় চলতে হিমশিম খাচ্ছেন রিকশা-ভ্যান চালকেরাও।
বাইসাইকেলে করে গ্রামে কাপড় বিক্রি করা বৃদ্ধ দবির আলী দুপুরের গরমে ক্লান্ত হয়ে একটি দোকানের চৌকিতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। ধানচাষি রাসেল বলেন, "বোরোর ভরা মৌসুমে তীব্র খরা চলছে। প্রতিদিন ধানে সেচ দিতে হচ্ছে, কিন্তু বৃষ্টি নেই। ডিজেলের দাম বেশি, তাই চরম বিপাকে আছি।"
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
ভ্যান চালক বাদশা জানান, "সকালে কিছু ভাড়া পাওয়া গেলেও, রোদ বাড়ার পর আর ভাড়া হচ্ছে না। বসে থাকতে হচ্ছে, অথচ সামনে ঈদ, পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি।"
দিনমজুর পিন্টু মিয়া বলেন, "রোদে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ কাজ করার পর গাছের নিচে এসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে।"
গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৮.৫ ডিগ্রির মধ্যে ছিল। তবে আজ শুক্রবার (২৮ মার্চ) তা বেড়ে ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে, যা চলমান গরমের চরম রূপ ফুটিয়ে তুলছে।
হয়রানিমুক্ত নাগরিক সেবা নিশ্চিতসহ জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ১২ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
প্রধান নির্দেশনাগুলো:
১. জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জমির নামজারি ও রেজিস্ট্রেশনসহ সব নাগরিক সেবা হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে।
২. পুলিশি তদন্ত ছাড়াই দ্রুত পাসপোর্ট প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. জনগণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সবধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৫. প্রশাসনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে হবে।
৭. জমি রেজিস্ট্রেশন, জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবাগুলোর মানোন্নয়ন করতে হবে।
8. মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
৯. মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম সরকারের সরাসরি নজরদারিতে থাকবে।
১০. জনগণের অভিযোগ ও সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে হবে।
১১. দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
১২. প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে কোনো ধরনের তদবির বা স্তুতিবাক্য গ্রহণযোগ্য হবে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়, জেলা প্রশাসকদের দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে আইন মেনে চলতে হবে এবং সেবা কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারের সব নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে কঠোর নজরদারি রাখা হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) দুপুরে শক্তিশালী জোড়া ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভারত ও বাংলাদেশ। ৭.৭ ও ৬.৪ মাত্রার এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, পাশাপাশি থাইল্যান্ডেও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া মিয়ানমারে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে অন্তত ৪৩ জন আটকা পড়েছেন।
বার্তাসংস্থা আনাদোলুর বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খিত তিত জানায়, ভূমিকম্পে মিয়ানমারের মান্দালয় প্রদেশের ফো শিং মসজিদসহ অন্তত চারটি মসজিদ ধসে পড়েছে। জুমার নামাজের সময় মসজিদ ধসে পড়ায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।
একজন উদ্ধারকর্মী জানান, “আমরা যখন নামাজ পড়ছিলাম, তখন হঠাৎ মসজিদ ধসে পড়ে। তিনটি মসজিদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আটকা পড়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে, তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
এছাড়া মান্দালয়ের ঐতিহাসিক আভা সেতু ও মান্দালয় প্রাসাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুয়াঙ্গো সিটিতে একটি মঠ ধসে পড়ায় পাঁচ উদ্বাস্তু শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল মিয়ানমারের সাগাইং শহরের ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। ফলে কম্পনের মাত্রা ছিল প্রবল, যা মিয়ানমারের বাইরেও বিভিন্ন দেশে অনুভূত হয়েছে।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ভূমিকম্পের ফলে একাধিক ভবন দুলতে দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবন মুহূর্তের মধ্যে ধসে পড়ে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই ভবনে তখন ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছিলেন। তাদের মধ্যে সাতজন বের হয়ে আসতে সক্ষম হন, তবে ৪৩ জন আটকা পড়েন। তাদের উদ্ধারে চলছে অভিযান।
ভূমিকম্পের ফলে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। উদ্ধার তৎপরতা চলছে, তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।