ঈদের দিনে ৭ জেলার সড়কে প্রাণ গেল ১২ জনের
ফাইল ছবি
গতকাল পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে সারাদেশের সড়ক দূর্ঘটনায় ১২ জনের প্রাণহানীর খবর পাওয়া গেছে। দেশের সাতটি জেলায় মোট আটটি দুর্ঘটনায় এসব প্রাণহানি ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির খবর মিলেছে গাজীপুর থেকে। এ জেলায় দুটি দুর্ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও দিনাজপুরে দুইজন করে এবং বগুড়া, নওগাঁ ও চুয়াডাঙ্গায় একজন করে মোট ৯ জন সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন একইদিনে।
দিনের শুরুতেই ভোর পৌনে চারটার দিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে উড়াল সেতুর ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রাণ হারিয়েছেন দেলোয়ার ও রাকিব নামে মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে নাজিম নামে অপর বন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভোর পৌনে ৪টার দিকে ঢাকা থেকে তিন বন্ধু মোটরসাইকেলে করে টঙ্গীর দিকে যাচ্ছিলেন। তাদের মোটরসাইকেলটি টঙ্গীর আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামের সামনে বিআরটিএ’র ফ্লাইওভারের ওপর ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়ায় গাড়ি চাপায় প্রাণ হারান অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
একইদিন সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ঘটে আরেকটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারান রবিউল খান (৫০) ও হুমায়ুন খান (৪৫) নামে আপন দুই ভাই। উপজেলার সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মনিরুল ইসলাম নামে আরও একজন আহত হয়েছেন। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হতাহতদের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রবিউল ও হুমায়ুন ঢাকায় জুতার ব্যবসা করেন। আহত মনির তাদের পূর্বপরিচিত। ঈদের ছুটিতে তিনজন মিলে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সোহাগপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে। এতে তিনজনই গুরুতর আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুই ভাইকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে দিনাজপুরের বিরামপুরে ঈদের দিনের জন্য সেমাই কিনতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এম এ কে আজাদ (৭০) নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। একই দুর্ঘটনায় তার সঙ্গে মৃত্যু হয় এনামুল হক (৪২) নামে আরেক ব্যক্তির।
সোমবার সকালে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের দিওড় বটতলী নামক স্থানে মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আজাদ তার বাড়ি থেকে অটোরিকশায় চড়ে সেমাই কিনতে বিরামপুর বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। ওই অটোরিকশায় ছিলেন এনামুল হকও। তাদের অটোরিকশাটি দিওড় বটতলী নামক স্থানে পৌঁছালে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক সেটিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে অটোরিকশার দুই যাত্রী আজাদ ও এনামুল গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে, সকাল ৭টার দিকে বগুড়ার আদমদীঘিতে বাবার সঙ্গে কোরবানির গরু আনতে যাওয়ার পথে ভটভটি উল্টে প্রাণ হারায় আহোনা আবিদ দোহা (১৪) নামে এক স্কুলছাত্র। বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের বাবলা তলা নামক স্থানে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহত দোহা নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
আদমদিঘী থানার ওসি রাজেশ চক্রবর্তী জানান, স্থানীয় সাইদুজ্জামান তোতা তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে খামারে রেখে আসা কোরবানির গরু আনতে ভটভটিযোগে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বাবলাতলা নামক স্থানে মোড় ঘোরার সময় ভটভটিটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে ভটভটির নিচে চাপা পড়ে ছেলেসহ গুরুতর আহত হন সাইদুজ্জামান। স্থানীয় লোকজন বাবা-ছেলেকে উদ্ধার করে আদমদিঘী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ছেলে দোহাকে মৃত ঘোষণা করেন।
একইদিন চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগরে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ হারান শুকুর হালসানা (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। এ সময় জীবননগর–চ্যাংখালি সড়কের পিচমোড়ে পৌঁছালে পিছন থেকে আসা একটি দ্রুতগতির মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বেলা ১১টার দিকে নওগাঁর নিয়ামতপুরে মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাণ হারায় হৃদয় (১৮) নামে এক তরুণ। তার পরিবারের লোকেরা জানায়, ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে মোটরসাইকেল পরিষ্কার করতে নিয়ামতপুরের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় সে। পুলিশ জানায়, দ্রুত গতিতে থাকায় খড়িবাড়ি বাজারে নিয়ামতপুরগামী রাস্তার বাঁকে পৌঁছে আর মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারেনি হৃদয়। রাস্তার পাশে একটি আমগাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার মোটরসাইকেলটির। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
একইদিন দুপুরে আরেকটি মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। ঈদ উপলক্ষে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে প্রাণ হারায় রনি (১৮) ও আশিক (১৭) নামে দুই বন্ধু। উপজেলার পৌর সদরের পাইভাকুরী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ঈদ উপলক্ষে ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় ওই দুই বন্ধু। ঈশ্বরগঞ্জ-নেত্রকোনা আঞ্চলিক মহাসড়ক ধরে পার্শ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার তেলিহাটির দিকে যাচ্ছিল তারা। কিন্তু পথিমধ্যে ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার পাইভাকুরী গ্রামের তালুকদার রাইস মিলের কাছাকাছি এসে তাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাইস মিলের দেওয়ালে ধাক্কা খায়। এতে রনি ও আশিক দুজনই গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রথমে রনিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এছাড়া আশিকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান তিনি। কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয় তারও।