তরুণরা তামাকের পেছনে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেন
যুবকদের তামাক ব্যবহার হ্রাস : জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পেনশন কর্মসূচি জোরদার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা। ছবি: সংগৃহীত
দেশে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণরা তামাকের পিছনে বছরে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। যা দেশের বার্ষিক বাজেটের ৭ শতাংশের বেশি। দেশে বর্তমানে প্রতি আটজনের একজন (২ কোটি ১০ লাখ) পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে না। তামাকজাত দ্রব্যের কর ও মূল্য উচ্চহারে বৃদ্ধি করে এই বাড়তি রাজস্ব জনগণের জন্য পুষ্টিকর খাবারে ভর্তুকিতে ব্যয় করা হলে ২৭ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।
এছাড়া তরুণদেরকে তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ে উদ্ধুদ্ধ করা গেলে তাদের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং দেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন হবে। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা)-এর উদ্যোগে রাজধানীতে পরিচালিত জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। ঢাকা শহরের ১৮-৩০ বছর বয়সী তরুণদের ওপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।
গতকাল সোমবার (২৭ মে) বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রে ‘যুবকদের তামাক ব্যবহার হ্রাস : জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও পেনশন কর্মসূচি জোরদার’ শীর্ষক আলোচনায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্য। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন- স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো: এনামুল হক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো: এনামুল হক, অর্থ মন্ত্রালয়ের যুগ্ম সচিব ড. এ কে এম আতিকুল হক, জাতীয় রাজস্ব বের্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটিজিসের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।
এতে কবিরুল ইজদানী খান বলেন, তরুণদের তামাক সেবনের মতো অস্বাস্থ্যকর খাতে ব্যয় নিরুৎসাহিত করে পেনশন স্কিমে অর্থ জমা করতে উদ্বুদ্ধ করার চিন্তা খুবই প্রশংসনীয়। আমাদের জনগণের এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ও অস্বাস্থ্যকর ব্যয় পরিহার করতে হবে এবং পেনশন স্কিমে জমা করার মতো কাজে উৎসাহী করতে হবে। তিনি তামাকজাত দ্রব্যের ওপর পেনশন সারচার্জ যুক্ত করার বিষয়ে আলোকপাত করেন।
ড. মো: এনামুল হক বলেন, তরুণ প্রজন্মকে স্থায়িত্বশীল জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে তামাক, কোমল পানীয়সহ সব অস্বাস্থ্যকর দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে তামাক এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ বিষয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষতি করছে। এটি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন বহুমাত্রিক উদ্যোগ। তামাক ও অস্বাস্থ্যকর পণ্য নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি টেকসই এবং সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব নয়। তামাক, সুগার, সুইট অ্যান্ড বেভারেজ (এসএসবি) ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভায় জনস্বাস্থ্য গবেষক ও সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা বলেন, বিদেশী সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের তামাক সেবনে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা তরুণদের অর্থকে হাতিয়ে নিতে সিগারেটের সাথে চকোলেট দিচ্ছে। এটা তাদের বাজার আর মুনাফা বৃদ্ধির কৌশল।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা আরো বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ৩০% কর বৃদ্ধি করে এই অর্থ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয়কৃত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে একটি বড় ভূমিকা রাখবে।