সাবেক এমপি পাপুলের শ্যালিকা ও দুই কর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
সাবেক এমপি কাজী সহিদ ইসলাম পাপুল এবং তার শ্যালিকা জেসমিন প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ৫ বছরের আয়কর রিটার্ন ও রেজিস্ট্রার ঘষামাজা করে আয়, সম্পদ ও পারিবারিক ব্যয়ে পরিবর্তন করার অভিযোগে লক্ষীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধান ও দুই কর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জেসমিন প্রধান ছাড়াও মামলার অন্য দুই আসামি হচ্ছেন- ঢাকার কর অঞ্চল-৪ এর সার্কেল-৭৯ নম্বরে কর্মরত উপ কর কমিশনার খন্দকার মো. হাসানুল ইসলাম এবং কর অঞ্চল-৮ এর সার্কেল-১৬৫ নম্বরের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চমান সহকারী হিরেশ লাল বর্মণ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, জেসমিন প্রধান বেআইনিভাবে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করে কর অঞ্চল-৮ এর ১৬৫ নম্বর সার্কেল অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশে ২০১৬-২০১৭ করবর্ষ থেকে ২০২০-২০২১ করবর্ষ পর্যন্ত মোট পাঁচটি করবর্ষের আয়কর রিটার্নগুলো রিটার্ন রেজিস্টারে এন্ট্রি করান। সেই রেকর্ড থেকে মোট আয়ের কলামে ঘষামাজা করে বিভিন্ন সংখ্যা বসানো হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। এছাড়া রিটার্ন রেজিস্টারে পারিবারিক ব্যয়ের যে তথ্য লেখা রয়েছে, তা আয়কর রিটার্নে ভিন্ন পাওয়া যায়।
এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, আয়কর নির্ধারণী আদেশপত্রে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর রিটার্ন দাখিলের তারিখেই করদাতাকে ওই মাসের ৩১ ডিসেম্বর শুনানির জন্য ৭৯ ও ৮৩ (১) ধারায় নোটিশ জারি করা হয়। সার্কেল কর্মকর্তা খন্দকার মো. হাসানুল ইসলামের কাছে করদাতার পক্ষে আয়কর আইনজীবী মো. আদনান শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানি শেষে ২০২০-২০২১ করবর্ষের আয়কর রিটার্ন ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রতিস্থাপন করা হয়।
এজাহারে আয়কর নথি জালিয়াতির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন মামলার বাদী ও দুদকের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করে আগের আয়কর রিটার্ন পরিবর্তন করে মনগড়া আয়কর রিটার্ন খাঁটি হিসেবে দাখিল এবং সার্কেলের যাবতীয় রেজিস্টারে ঘষামাজা করে মোট আয়, মোট সম্পদ, নিট সম্পদ, পারিবারিক ব্যয় ইত্যাদির টাকার অঙ্ক পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হয়। এসব প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আসামিরা দণ্ডবিধি ও দুদক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল। পরে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত সংসদীয় আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ প্রদানের অভিযোগে ২০২০ সালের জুন মাসে কুয়েতে গ্রেফতার হন পাপুল। ওই মামলার বিচার শেষে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন কুয়েতের একটি আদালত।
কুয়েতের রায়ের নথি হাতে পাওয়ার পর ২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা হয়। এর আগে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল, তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা জেসমিন প্রধান এবং মেয়ে ওয়াফা ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকার মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয় ওই মামলায়।