জাহাজেই ঈদের নামাজ আদায় করলেন জিম্মি নাবিকরা
জাহাজেই ঈদের নামাজ আদায় করলেন জিম্মি নাবিকরা। ছবি: সংগৃহীত
জাহাজেই ঈদের নামাজ আদায় করলেন সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিকরা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় সকাল ১১টায় তারা জাহাজের ডকে নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর তারা একসঙ্গে ছবিও তোলেন। ছবিটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ বর্তমানে সোমালীয় জলসীমায় অবস্থান করছে। সোমালিয়াসহ ওই অঞ্চলের দেশগুলোতে বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য এদিন নাবিকদের জাহাজের ডকে যাওয়ার সুযোগ দেয় দস্যুরা। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে নাবিকদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয় বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি।
অন্যদিকে চট্টগ্রামের এসআর শিপিং-এর জাহাজ 'এমভি ইব্রাহিম জাহান' এখন ইন্দোনেশিয়া উপকূলে নোঙর করে আছে কয়লা তোলার জন্য। জাহাজের ২৪ জন বাংলাদেশি নাবিক সেখানেই ঈদ উদযাপন করছেন, নামাজও পড়েছেন। সোমালি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি সহকর্মীদের মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছেন ঈদের নামাজে।
এস আর শিপিং-এর আরেকটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ২৩ নাবিককে মুক্তিপণের দাবিতে জিম্মি করে রেখেছে সোমালি জলদস্যুরা। গত এক মাস ধরে তারা আছেন বন্দিদশায়।
একই কোম্পানির জাহাজ এমভি ইব্রাহিম জাহানের চিফ অফিসার মাহফুজুর রহমান টিটুর বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলায়। জাহাজীর পেশায় এর মধ্যেই পার করে ফেলেছেন অনেকগুলো বছর। সকালে নিজের ফেইসবুক পাতায় জাহাজে ঈদের নামাজ পড়ার ছবি দিয়েছেন। সেই ছবি দেখে যোগাযোগ করা হলে মাহফুজুর বলেন, তারা ইন্দোনেশিয়ার একটি অ্যাংকোরেজে অবস্থান করছেন কয়লা ‘লোড করার’ জন্য। কয়লা নিয়ে তারা যাবেন ভিয়েতনামে। ইন্দোনেশিয়ার সময়সূচি অনুযায়ী বুধবার (১০ এপ্রিল) তারা ঈদ উদযাপন করছেন।
ঈদ কীভাবে কাটছে জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা এখানে ২৪ জন বাংলাদেশি আছি। মা-বাবা আত্মীয় পরিজন ছেড়ে আমরাই আমাদের আত্মীয়। আমাদের কোম্পানিরই আরেকটি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ সোমালি জলদস্যদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে। ওই জাহাজের কর্মীদের অনেকেই এখানকার কর্মীদের বন্ধু, পরিচিত। বন্ধুরা জিম্মি থাকায় এখানকার অনেকের মন খারাপ। তবুও ঈদ এসেছে, জলে ভেসে থেকেও আমাদের উদযাপন করতে হবে।
ইব্রাহিম জাহানের চিফ অফিসার জানালেন, সকালে উঠে পায়জামা পাঞ্জাবি পরে জাহাজের ডেকে শতরঞ্জি বিছিয়ে নামাজ পড়েছেন তারা। তিনি আরও বলেন, নামাজ শেষ আমরা সকলের জন্য দোয়া করলাম, বিশেষ করে আমাদের জিম্মি হয়ে থাকা বন্ধু ও সহকর্মীদের জন্য। আমরা তো তবু জাহাজে উদযাপন করতে পারছি, তারা আছে বন্দুকের নলের মুখে। তাদের যারা পাহারা দিচ্ছে, সবার হাতে একে ৪৭ বন্দুক।
ঈদ উপলক্ষে জাহাজে আজ ভালো খাবারের আয়োজন হয়েছে। গরুর কালা ভুনা, চিকেন টিক্কা, রাশান সালাদের সঙ্গে কাশ্মিরি পোলাও। আইসক্রিমসহ বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্নও আছে।
এই উদযাপনের মধ্যেও এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার কথা জানালেন ইব্রাহিম জাহানের চিফ অফিসার। তিনি বলেন, আজকে আমাদের অনেকেই ওই জাহাজের বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ওই জাহাজ থেকে জানিয়েছে, তাদের সারাক্ষণ বন্দুকের নলের মুখে পাহারা দেওয়া হয়। বন্দুকের নলের মুখে মানুষ কতটা ভালো থাকতে পারে, সেটা যেন আমরা বুঝতে পারি, সেই অনুরোধও তারা করেছেন।
এদিকে দেশের অনেক সংবাদমাধ্যমে লেখা হয়েছে, দস্যুরা তাদের জামাই আদরে রাখছে, দুম্বা-বিরিয়ানি খেতে দিচ্ছে। এটা নিয়ে মন খারাপ এমভি আব্দুল্লার নাবিকদের। তারা বলেছেন, এখানে যেটা পাওয়া যায় জলদস্যুরা সেটাই এনে দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে তাদের খুব সমাদর করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা বন্দুকের নলের মুখে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন নাবিকরা। তারা সকলের দোয়া চেয়েছেন।