মন্ত্রীদের বক্তব্যে ক্ষোভ ঝাড়লেন জাপা নেতা ফিরোজ রশীদ
টাকা পাচারের জবাবদিহি কে করবে বলে প্রশ্ন রেখেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
তিনি বলেন, ‘কোনো মন্ত্রীর কী দায়িত্ব সেটাও জানি না। ব্যাংকের যেমন জবাবদিহি নেই, মন্ত্রীদেরও জবাবদিহি নেই। খালেদা জিয়ার রাজনীতি নিয়েও একেক মন্ত্রী, একেক ধরনের বক্তব্য দেওয়ার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে টাকা পাচার অব্যাহত থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন তিনি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের লাইসেন্স দেন। সেটা কীভাবে চলবে তা ঠিক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগ। তাদের জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। কেন জনগণের টাকা লুটপাট হচ্ছে, কে দায়ী এসবের জন্য? তদন্ত কমিটিও গঠনের দাবি জানান তিনি।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে জাপা নেতা ফিরোজ রশীদ বলেন, সাউথ বাংলা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে চলে গেছেন।
তিনি পাচার করা অর্থে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান এবং একাধিক বাড়ি কিনে বসবাস করছেন। তিনি একা এই কাজ করেননি। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত প্রত্যেক ব্যাংকে অডিট করে। এক হাজার কোটি টাকা তো একদিনেই নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় কী করল?
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, এটা নিয়ে আমরা কথা বলতে পারব না। এখানে অর্থমন্ত্রী কখনো থাকেন না। তিনি কোনো কথাই শুনতে চান না।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক মালিকরা জনগণের টাকা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। ব্যাংকগুলো পারিবারিক হয়ে গেছে। এগুলো জনগণের ব্যাংক নেই। ব্যাংকের মালিকদের চাকর-বাকরদেরও কোনো অসুখ হলে সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক চলে যাবে চিকিৎসার জন্য। জনগণের টাকা রক্ষায় অর্থমন্ত্রী বা অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এর আগে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ড নিয়ে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে বিবৃতি দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রীর বিবৃতির সমালোচনা করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বিরাট, লম্বা-চওড়া বিবৃতি শোনালেন, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, তিনি নিজে দিন-রাত পরিশ্রম করে আগুন নিভিয়েছেন। আসলে আগুন নেভাননি, আগুন আজও জ্বলছে।
তিনি আরও বলেন, বিমানবাহিনী হেলিকপ্টারে পানি ছিটিয়েছে। পানি পড়তে পড়তে কিছু আর থাকে না। ওটা অক্সিজেন হয়ে যায়। তারা গিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার রক্ষা করতে পেরেছেন। একটা দোকানও রক্ষা পায়নি। এটা হলো আসল কথা। যতবেশি লোকজন গেছে, ততবেশি লুটপাট হয়েছে। আগে ব্যবস্থা নিলে লুটপাট হতো না। আপনি বিরাট এক ফিরিস্তি দিয়েছেন কিন্তু মানুষ রক্ষা পায়নি। চিকিৎসা ভালো হয়েছে, কিন্তু রোগী মারা গেছে।
মন্ত্রীদের সমালোচনা করে বিরোধী দলের ওই সংসদ সদস্য বলেন, মন্ত্রীরা একেক সময় একেক কথা বলেন। আমরা শুনছি খালেদা জিয়া, উনি সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি, উনি নাকি নির্বাচন করতে পারবেন না। তবে উনি যেখানে থাকুক রাজনীতি চর্চা করতে পারবেন, রাজনীতি করার অধিকার ওনার আছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেছেন। আরেক মন্ত্রী (হাছান মাহমুদ) বলছেন উনার রাজনীতিও বন্ধ করা হয়েছে, উনি রাজনীতি করতে পারবেন না। আমরা কার কথা শুনব। আমাদের খোলাসা করে বলতে হবে, আসলে উনি কী করতে পারবেন। এখন ঘটনা হচ্ছে, আইনমন্ত্রী দেবেন আইনের ব্যাখ্যা, অর্থমন্ত্রী দেবেন অর্থের ব্যাখ্যা। সবাই যদি বলতে থাকেন তাহলে আমরা কার কথা গ্রহণ করব?, যোগ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পাটির আরেক সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘দেশে প্রতিনিয়ত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। মোকাবিলায় প্রস্তুতির অবস্থা খারাপ। বঙ্গবাজারে হাজার হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঢাকার ভেতর স্থাপনা অপরিকল্পিত। এখানে আগুন নেভানোর সুযোগ নেই। চুরি পট্টি সরানোর কথা, সেটা এখনো হয়নি। যাদের এসব দেখার কথা তারা কী করছেন?’
এনএইচবি/এমএমএ/