জনগণের সমর্থনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
জনগণের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ যেকোনো বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, জনগণ আমাদের পাশে থাকলে যেকোনো প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এর সেরা উদাহরণ।’
বুধবার (৫ এপ্রিল) পদ্মা সেতুর ঋণ পরিশোধের প্রথম কিস্তির চেক গ্রহণকালে তিনি এ কথা বলেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঋণ পরিশোধের প্রথম কিস্তি হিসেবে প্রায় ৩১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ স্থগিত এবং পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি সংস্থা একই কাজ করায় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ার পর তারা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন।’
অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে এ ঋণ নেওয়া হয়।
গত বছরের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী প্রমত্তা পদ্মা নদীর উপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম সেতু উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে তার সরকারকে সার্বিক সমর্থন দেওয়ায় জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে জনগণ যেভাবে সমর্থন দিয়েছে তেমনি দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পুরো জাতি সরকারের সঙ্গে হাত মেলাবে।
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের পাশে থাকলে দুর্যোগের মতো যেকোনো বাধা অতিক্রম করে আমরা দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার প্রধান শক্তি জনগণ। আমাদের অটুট সমর্থন দিয়ে (বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করে) অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রধানমন্ত্রী তাদের তীব্র সমালোচনা করেন যারা মনে করেন অন্যের সাহায্য ছাড়া বাংলাদেশের উন্নতি সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘তবে, আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণ করেছি এবং বৈশ্বিক মর্যাদা ও সম্মান অর্জন করেছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়, বাঙালি জাতির গর্ব ও সামর্থের প্রতীক।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য যে ঋণ নেওয়া হয়েছে তা আমরা এখন টোল থেকে পরিশোধ করতে পারব।’
পদ্মা সেতুর মেয়াদ ১০০ বছরের বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে আগামী ৩৫ বছরে টোল থেকে এর নির্মাণ ব্যয় আহরণ করা সম্ভব হবে।
বঙ্গবাজার আগুন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে যে সব ব্যবসায়ী বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তাদের সর্বাত্মক সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, ‘রমজানে ব্যবসায়ীদের কষ্ট ও কান্না সহ্য করা যায় না। আমি আগেই বলেছি আমরা সাধ্যমতো সাহায্য করব। আমরা ব্যবসায়ীদের ক্ষতির মূল্যায়ন করব।’
তিনি হুঁশিয়ার করে দেন যে, অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের ক্ষতি করার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, ‘যারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার ব্রিগেড সদর দফতরে প্রবেশ করে অগ্নিনির্বাপক যানবাহনের ক্ষতি করেছে, আমি তাদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, অগ্নিকাণ্ড শুরু হওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও দুপুরে একদল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার সার্ভিস অফিসে হামলা চালায়।
তিনি বলেন, ফায়ার ফাইটারদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরাও বঙ্গবাজারের আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেন।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে কেউ অগ্নিনির্বাপক যানবাহন বা ফায়ারম্যান বা কোনো পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার উপর আক্রমণ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এমএমএ/