ঝুঁকিপূর্ণ বিপণি বিতান ছাড়ার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর
ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ঢাকার বিপণি বিতানগুলো এখনই ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ‘কাঁচা স্থাপনা না থাকাই উচিৎ’।
বুধবার (৫ এপ্রিল) বিকালে অগ্নিকান্ডে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
অপরদিকে, বুধবার দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেছেন, ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোয় জরিপ চালাতে মাঠে নামছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
তিনি বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে রাজধানী সুপার মার্কেট, গাউছিয়াসহ বেশ কিছু মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে এসব মার্কেটে জরিপ শুরু হবে। জরিপের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবেই জানানো হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই ফায়ার সার্ভিস যেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেগুলো যেন ব্যবসায়ীরা ইমিডিয়েটলি পরিত্যাগ করেন। ভবিষ্যতে যেন আর এরকম দুর্ঘটনা না হয় সেজন্য আমি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করব আপনারা ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশিকাগুলো মেনে চলবেন। সেইসঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ যদি আর কোনো মার্কেট থাকে ফায়ার সার্ভিস সেটাও নির্দেশনা দেবে। ব্যবসায়ীদেরও এসব বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।’
অগ্নিনির্বাপনের সব রকম ব্যবস্থা না থাকায় কোনো বিপণি বিতান ঝুঁকিপূর্ণ হলে সেখান থেকে ব্যবসা ধীরে ধীরে সরিয়ে নিতেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঢাকা শহরে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ভবনগুলো অপসারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ না। এটা রাজউক ও সিটি করপোরেশনের কাজ।’
আসাদুজ্জামান খান জানান, অনেক আগেই ফায়ার সার্ভিসের ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা কয়েকটি বিপণি বিতান তালিকায় রয়েছে। বঙ্গবাজারও ছিল তার মধ্যে। অন্যগুলোর কথা আমি বলতে চাই এই সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট যেন আমরা পরিত্যাগ করি।
পুনর্বাসনের নামে একই ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা সিদ্ধান্ত হবে। এখন সিটি করপোরেশন এখানে ব্যবস্থা নেবেন। তারা প্ল্যান করে এরকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেই ব্যবস্থা করবেন।’
ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করার পরও ব্যবস্থা নিতে না পারা আপনাদের দুর্বলতা কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নতুন করে একটা ১০ তলা ভবনের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল। টেন্ডারও করেছিল। আমাদের ব্যবসায়ীরা সময় চেয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে তারা একটা স্টে অর্ডার নিয়ে এসেছিল।’
এখানে ফের ‘কাঁচা স্থাপনা নির্মাণ যৌক্তিক কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, এখানে কাঁচা স্থাপনা না থাকাই উচিৎ।
পুলিশ সদর দপ্তর নিরাপদ জায়গায় আছে কি না প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটাতো নিরাপদ জায়গাতেই আছে। মার্কেটে আগুন না লাগলে তো সেটা নিরাপদেই ছিল। যারা এ ধরনের মার্কেট করবেন তারা যেন পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন।
এই অপূরণীয় ক্ষতি একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমরা এই বিষয়গুলোকে কীভাবে প্রটেকশন দেব সেই প্রশ্নও এসে গেছে। এর পাশে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, সেটাও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কিছু অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রপাতি তারা রাখে। সেগুলোর জন্য তারা কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পেরেছে। যদিও কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাকি এই চারটি মার্কেট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে যাতে করে জানা যায় কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল এবং ভবিষ্যতে করণীয় কী সে বিষয়েও কমিটিগুলো আমাদের দিকনির্দেশনা দেবে।’
তিনি বলেন, ‘এই ব্যবসায়ীরা তৈরি হয়েছিলেন ঈদের বাজার ধরতে। আমরা এটাও জানি এই ব্যবসার জন্য তারা সারা বছর বসে থাকেন। সেজন্য তারা বিভিন্নভাবে পণ্য সংগ্রহ করেন। তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এই পণ্য সংগ্রহ করেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এটা সবসময় মনিটর করছেন। এটা কী করা যায় তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তীতে।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর রাস্তার উল্টো দিকের ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি নষ্ট হয়েছে। আমি মনে করি তাদের ধৈর্য ধরা উচিৎ ছিল। তাদের যদি কিছু বলার ছিল পরে তারা বলতে পারত। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে অগ্নিনির্বাপনের কাজ করছে।
হামলায় রোবোটিক সিস্টেমে চলে ফায়ার সার্ভিসের এমন একটি দামি গাড়িও নষ্ট হয়েছে। আহত হয়েছে অনেকেই।
দুর্ঘটনার সময় সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যদি কোনো সংস্থার গাফিলতি আমরা দেখি তাহলে তো অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। দুটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির মূল্যায়নে যদি কারও গাফিলতি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। ফায়ার ব্রিগেডে ভাঙচুরের ঘটনায় তারা মামলাতো একটা করবেই। এটা আমরা দেখছি।
আগুনের পরের ঘটনা তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যতটুকু শুনেছি ৬টা ১০ মিনিটে আগুন ধরে যাওয়ার পর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আসে। তারা আগুন নেভানো শুরু করে। কিন্তু আপনারা দেখেছেন আগুন কিন্তু চোখের নিমিষেই অনেক বিস্তার করে। ফায়ার সার্ভিসের এক্সপার্ট লোকেরা কাজ করতে এলেও নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করেও দীর্ঘ সময় পরে আগুন নেভাতে পেরেছেন।’
কাপড় ও কাগজে আগুন লাগলে তা নেভাতে সময় লাগে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় মানুষ মিলে সম্মিলিত ব্যবস্থা নিয়েছিল।
পানির ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত নয়-ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি। কিন্তু তারা অসহায় হয়ে যায় যখন পানির আধার না থাকে। ২০ বছর আগে এখানে অনেক পুকুর ছিল। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে সব ভরে ইমারত করে ফেলেছি।
সবসময় পানি সরবরাহ থাকার জন্য আমি মনে করি সিটি করপোরেশন ও রাজউক এটার ব্যবস্থা নেবে।
এনএইচবি/এমএমএ/