সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ: মন্ত্রী
ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম। একইসঙ্গে বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরেই ঢাকা থেকে মাওযা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করা হবে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা ২১ মিনিটে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে বিকাল ৩টা ১৮ মিনিটে মাওয়া স্টেশনে এসে পৌঁছে পরীক্ষামূলক ট্রেনটি। স্টেশন প্ল্যাটফর্মে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং করেন রেলমন্ত্রী।
এসময় নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আজ একটা ঐতিহাসিক দিন। আমরা পদ্মা সেতু দিয়ে সফলভাবে পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়েছি। আশা করছি আগামী সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। এরপরই ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে।’
ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৭টি বগির নিয়ে ছেড়ে আসে পরীক্ষামূলক ট্রেন। সেখানে রেলমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন সংসদ সদস্য, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাধারণ মানুষ। ট্রেনটি পদ্মা সেতুতে ওঠার মুহূর্তে সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিয়ারের কাছে ও সেতু থেকে নামার সময় মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে প্রকল্পের কর্মকর্তা ও শ্রমিকেরা আতশবাজি ফোটান এবং নিজেদের উল্লাস প্রকাশ করেন।
প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘আজ বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুতে রেল চালানো হয়েছে। ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ আমরা অতিক্রম করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময় ঢাকা-ভাঙ্গা ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। ওই মেয়াদের মধ্যেই যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। প্রকল্পের মেয়াদের আগ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
নুরুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা থেকে মাওয়া, মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা থেকে যশোর। কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩০ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা থেকে মাওয়া ৭৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে ৯২ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৬৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। পুরো ঢাকা-যশোরের এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৭৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকার কমলাপুর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার অংশে ট্রেন চলাচল করবে।’
যাত্রীদের ট্রেনে চলাচলের জন্য ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত ৪টি স্টেশন ও ১টি জংশন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাঙ্গা স্টেশনের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ, ভাঙ্গা জংশন স্টেশনের অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ, শিবচর জংশন স্টেশনের অগ্রগতি ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, পদ্মা স্টেশনের অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও মাওয়া স্টেশনের অগ্রগতি হয়েছে ৮৯ শতাংশ।
পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের মাওয়া স্টেশন থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব রেলপথে ৪২ কিলোমিটার। মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথের ৪২ কিলোমিটারের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর আগে গত বছর ১ নভেম্বর ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার রেললাইনে রেল চালানো হয়।
রেল লিংক প্রকল্পের ব্যয় সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রকল্প ব্যয় এখন পর্যন্ত বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগামী বছর ছাড়া বলা যাবে না। আগামী বছর জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার আমাদের যে সময় নির্ধারণ করা আছে, এটি তখন বলা যাবে।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রুটে আমাদের রেল চলাচল করে। সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যা ভাড়া হয়, তাই নির্ধারণ করা হবে।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী), ইকবাল হোসেন অপু, নাহিম রাজ্জাক, ও সাগুপ্তা ইয়াসমিন এমিলি উপস্থিত ছিলেন।
এনএইচবি/এমএমএ/