আগামীকাল ‘কাফনের কাপড়’ পরে মিছিল
‘লাল কার্ড’ দেখালেন শিক্ষার্থীরা
সড়কের অনিয়ম বন্ধের দাবিতে ‘লাল কার্ড’ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী হিসেবে শনিবার বেলা ১২টার পরপরই রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর অবস্থান নিয়ে ‘লাল কার্ড’ দেখান শিক্ষার্থীরা।
নয় দফা দাবিতে আগামীকাল শাহবাগ থেকে কাফনের কাপড় পরে প্রতীকী লাশের মিছিল এবং ১০ ডিসেম্বর সারাদেশে সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সব কর্মসূচী পালন করে আসছি। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচীর মাধ্যমে নয় দফা দাবী আদায় করা হবে। এই আন্দোলনের ওপর ভর করে কেউ নাশকতা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খিলগাঁও মডেল কলেজের ২০-৩০ জন শিক্ষার্থী রামপুরা ব্রিজের হাতিরঝিল থানা অংশে লাল কার্ড নিয়ে অবস্থান নেয়। পরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাতে অংশ নেন। শিক্ষার্থীদের ‘লাল কার্ড’ কর্মসূচীতে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ না হলেও প্রগতি সরণির একপাশে যান চলাচল কিছুটা ব্যাহত হতে দেখা যায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। পাশাপাশি নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। এদিন শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে কর্মসূচীতে অংশ নিতে দেখা যায়।
সড়কে একের পর এক মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে দাবি করেন কর্মসূচীর নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। খিলগাঁও মডেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সড়ক ব্যবস্থাপনায় জড়িত সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষরা দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে উঠেছেন। যার ফলে আমরা দেখতে পাই রাস্তায় ফিটনেসবিহীন, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি ও অপেশাদার চালক নিয়োগ দেওয়া হয়। দেশে কোনো ব্রিজ নির্মাণ হলে সেখানে যত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ে থাকে, এর অর্ধেক অর্থ লুটপাট হয়ে যায়। আমাদের দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হলে বছর যেতে না যেতে সেই রাস্তা ভঙ্গুর হয়ে যায়।’
‘লাল কার্ড’ দেখানোর এই কর্মসূচী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সড়কের দুর্নীতিকে আমরা আজকে লাল কার্ড দেখাচ্ছি। মাঠে যখন ফুটবল খেলা হয়, তখন খেলোয়াড়রা কোনো ভুল বা অন্যায় করলে রেফারি লাল কার্ড দেখায়, আমরা সেই রেফারির ভূমিকা পালন করতে চাচ্ছি।’
নয় দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় একের পর এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা ঘটছে। শনিবার ভোররাতে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে লরির চাপায় এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হন। তার নাম মো. মেহেদী হাসান লিমন (২১)। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।
এদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বাসের ভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। এরপর ১৮ নভেম্বর অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যু হয়। পরদিন রাজধানীর পান্থপথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এক সংবাদকর্মী।
এর কয়েক দিন পর রামপুরায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মাঈনুদ্দিন দুর্জয় নামে আরেক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে নিরাপদ সড়ক, অর্ধেক ভাড়াসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। শুধু ঢাকার জন্য অর্ধেক ভাড়া প্রত্যাখ্যান করে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
এনএইচ/এসএ