তৃণমূল পর্যন্ত মানুষকে সক্ষম করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণকে যেন অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তুলতে পারি। যেটা আমাদের লক্ষ্য। আমাদের উন্নয়ন শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক হবে না। তৃণমূল পর্যন্ত মানুষকেও সক্ষম করতে চাই। এতে শহরমুখী প্রবণতা কমবে। গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য তৈরি হবে।
মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিসিদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের জনগণের সেবায় আন্তরিকতার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এতে কাজ করে শান্তি পাবেন।
ডিসিদের প্রশংসা করে সরকারপ্রধান বলেন, একটা পরিবর্তন দেখেছি আপনাদের মধ্যে। আমার বাবাও ক্ষমতায় ছিলেন, দেখেছি। আমি যখন বিরোধীদলে তখনো দেখেছি। ৮১ সালে সারাদেশ ঘুরেছি তখনো দেখেছি। আমি আসার পর কর্মকর্তাদের মধ্যে জনমুখী মনোভাব ও মানুষকে সেবার দেওয়ার আন্তরিকতা সৃষ্টি হয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আমরা তো জনপ্রতিনিধি, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আসি, মেয়াদ ৫ বছর।
শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের দায়িত্ব অনেক। শুধু চাকরি করা না, জনসেবা দেওয়া। এটা ছিল সংস্থাপন মন্ত্রণালয়। আমি নাম দেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নামেরও একটা প্রভাব থাকে। আপনাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেছেন। করোনায় আপনজন পাশে না থাকলেও আপনারা ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা না এলে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। যুদ্ধের ফলে পণ্যের দাম এত বেড়ে গেছে যেটা ক্রয় করাই আমাদের জন্য কঠিন। এজন্য সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য বলেছি।
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল মর্যাদা পেয়েছি। এটা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কী কী সুবিধা পাবো, কী কী সুবিধাবঞ্চিত হবো, এটা নিরূপণের জন্য একটা কমিটিও করে দিয়েছি। আমাদের অনেক ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগও আছে। সেটাও মোকাবিলা করতে হয়, হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার মধ্যে এমন একটা মানসিকতা ছিল যেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা বা পরামর্শ ছাড়া আমরা কোনো উন্নতি করতে পারবো না। আমি ভাবলাম, একেক সময় একেক কর্মকর্তা আসে। তারা আমাদের দেশের সম্পর্কে কতটুকু জানে? যার ফলে আমরা নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করলাম। যার কারণে বিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।
ডিসিদের শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই কোনো প্রজেক্ট নেওয়া হয়। যে এলাকায় নেওয়া হয়, সেখানে মানুষের জন্য কতটুকু কার্যকর হবে, কতটা উপকারে আসবে, এটা আপনাদের দেখতে হবে। যেখানে সেখানে যত্রতত্র পয়সার জন্য প্রকল্প নেওয়া আমি পছন্দ করি না। আয়বর্ধক প্রকল্প করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকেই দেখলাম—বিরোধীদলের একজন বলেছেন ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এত টাকা খরচ লাগবে। এটা বন্ধ করে দিছি। এখন আবার অনেকে বলছে, আমাদের আর্থিক সংকট। হ্যা, সংকট অবশ্যই আছে, এটা বিশ্বব্যাপী। তবে, আমাদের চলার মতো যতটুকু দরকার, সে অর্থ আছে।
তিনি আরও বলেন, করোনায় চিকিৎসা, টিকাসহ সুরক্ষার জন্য পানির মতো টাকা খরচ হয়েছে। সেটা আমরা করেছি। আমাদের এখন যেটা জরুরি, সেটা অগ্রাধিকার দেবো। আমরা কতকাল আমদানি নির্ভর থাকবো? আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে নিজেরাই উৎপাদন করবো। এক সময় তো ভারতীয় গরু ছাড়া আমাদের যেন কোরবানিই হতো না। এখন হচ্ছে না? হচ্ছে। আমরা নিজেদের উৎপাদনের উপর নির্ভর এখন।
এসময় কার্গো বিমান কেনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের কার্গো বিমান কেনার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। কিন্তু অর্থনৈতিক এ অবস্থায় কিনতে পারছি না। ভবিষ্যতে কিনবো পরিকল্পনা আছে।
ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি, নরসিংদীর জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বক্তব্য দেন।
এনএইচবি/আরএ/
