রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে
সাংবাদিক আতঙ্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

অতি গোপনীয় রাষ্ট্রীয় চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বড় ধরনের চাপে পড়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় চিঠি ফাঁসের ঘটনাটি দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এরফলে আন্ত:দেশীয় সম্পর্ক বিনষ্ট হতে পারে। কীভাবে রাষ্ট্রীয় চিঠি গণমাধ্যমে ফাঁস হলো এবং কারা এর সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, সম্প্রতি অস্ট্রিয়াতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের জন্য এগ্রিমো পাঠানো হয় অস্ট্রিয়া সরকারের কাছে। এটি সরকারের অতি গোপনীয় চিঠি। এগ্রিমো অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত তা কোনোভাবেই প্রকাশ করা যায় না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এগ্রিমো না পাওয়া পর্যন্ত তা প্রকাশ করতে পারে না। রাষ্ট্রদূত একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। যে দেশে রাষ্ট্রদূতকে পাঠানো হবে সেই দেশের সরকারের অনুমতি চেয়ে এগ্রিমো পাঠানো হয়। এগ্রিমো অনুমোদন করা না করা সেই দেশের এখতিয়ার। এগ্রিমো অনুমোদন না দেওয়ার ঘটনা অতীতেও ঘটেছে।
শুধু যে অন্য দেশের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেছে তা নয়। বাংলাদেশেও কোনো কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের এগ্রিমোতে অনুমোদন না দেওয়ার নজীর রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগ থেকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় চিঠি বাইরে গেল কীভাবে? তাহলে কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো নিরাপত্তা নেই! না কি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে!
বিশ্বের প্রতিটি দেশেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকে। সেখানে কর্মকর্তারা ছাড়া অন্য কারো প্রবেশাধিকার থাকে না। বাংলাদেশও সেই নীতি অনুসরণ করে। এরপরও নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে কীভাবে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় চিঠি সাংবাদিকদের হাতে গেল? এর আগেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সাইফার বার্তার মতো রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বার্তাও ফাঁস হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপনীয় শাখা থেকে চিঠি চুরি করে সাংবাদিকদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে। অনেকে বলছেন, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় চিঠি ফাঁসের ঘটনায় বড় ধরনের লেনদেন হয়েছে। এই কাজের সঙ্গে অসাধু কর্মকর্তা-সাংবাদিকদের একটি চক্র জড়িত। এরাই বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের গোপন তথ্যাদি ফাঁস করে থাকে। কিছু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে সাংবাদিকদের ব্যবহার করে থাকেন। এমনও অভিযোগ আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জনৈক সাংবাদিককে মন্ত্রণালয়ের ক্যালেন্ডার, ডায়েরি ও অন্যান্য ছাপা সংক্রান্ত কাজ দিয়ে সহায়তা করেন। কাউকে কাউকে দেওয়া হয় মাসোহারা। আর তার বিনিময়ে ওই ‘অসাধু সাংবাদিকদের’ দিয়ে নিজের মনমতো রিপোর্ট করান। এই অসাধু চক্রটি বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকজন মেধাবী কর্মকর্তার চরিত্র হনন করে পত্রিকায় রিপোর্ট করিয়েছেন। এদের টার্গেটে পড়ে বেশ কয়েকজন মেধাবী কর্মকর্তার ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অতি গোপনীয় রাষ্ট্রীয় চিঠি ফাঁসের ঘটনায় তোলপাড় চলছে মন্ত্রণালয়ে। কর্মকর্তারা রীতিমত সাংবাদিক আতঙ্কে ভুগছেন। প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারি বিশেষ নজরদারিতে আছেন। তাদের চলাফেরা ও গতিবিধি ফলো করা হচ্ছে। কাদের হাত দিয়ে চিঠি ফাঁস হয়েছে? কাদের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক অতি সখ্য তা খোঁজা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিপদে ফেলতেই চিঠি ফাঁসের ঘটনাটি ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কয়েকজন সচিব ও রাষ্ট্রদূত বলেন, রাষ্ট্রীয় চিঠি ফাঁসের ঘটনাটি নজিরবিহীন। এর পুরো দায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এরফলে শুধু আন্ত:দেশীয় সম্পর্কই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; দেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও প্রশ্নের মুখে পড়ে। সরকারের উচিত অতি দ্রুত ঘটনাটি সত্যনিষ্ঠ তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওয়ায় আনা। তা নাহলে আরও বড় কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে। তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদারের পরামর্শ দিয়েছেন।
আরএ/
