জনশক্তির বাজার অনুযায়ী পাঠ্যক্রম প্রণয়নের চিন্তা

আন্তর্জাতিক জনশক্তি বাজার পর্যালোচনা করছে সরকার। নতুন কী ধরনের পেশায় জনশক্তি লাগবে সেগুলো অনুসন্ধান করে রাষ্ট্রদূতদের প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত হলো জনশক্তি রপ্তানি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের এক কোটির বেশি কর্মী কাজ করছেন। তবে এসব কর্মীর বেশিরভাগই অদক্ষ। ফলে সংখ্যায় বেশি হলেও রেমিট্যান্স সেই তুলনায় কম আসছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের এক কোটি কর্মী যে রেমিট্যান্স পাঠান সেই পরিমাণ রেমিট্যান্স ১০ লাখ দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারত। কাজেই দক্ষ কর্মী সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশি কর্মীদের বেশিরভাগই এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মরত। বাংলাদেশ তাই চেষ্টা করছে নতুন নতুন দেশে নতুন নতুন পেশায় জনশক্তি রপ্তানি করতে। ইতিমধ্যে ইউরোপের কিছু দেশের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে গেছে।
নতুন বছরেই বিভিন্ন দেশে কী ধরনের পেশায় জনশক্তি লাগবে সেই অ্যাসাইনমেন্ট দূতাবাসগুলোকে দেওয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশ্বের সবগুলো বাংলাদেশ মিশনের প্রধানদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন জানান, আগের আমরা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে লোক পাঠাতাম। এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা অর্জন হয়েছে। এখন রোমানিয়া, মাল্টা, বুলগেরিয়া, গ্রিস-নতুন নতুন দেশে লোক পাঠাচ্ছি।
আর এখন আফ্রিকা মহাদেশের জন্য চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি আরও কোথায় কোথায় জনশক্তি পাঠানো যায়। আমরা শুধু অদক্ষ চাই না, আমরা দক্ষ ও পেশাদার কর্মী পাঠাতে চাই। আমরা রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশনা দিয়েছি যে কোন কোন ধরনের পেশায় লোক লাগবে সেটা আমাদের জানান। আমরা সেভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাইড করব যে তোমরা ওই ধরনের পাঠ্যক্রম বানাও।
এ ছাড়া, পাঠ্যক্রমও সেভাবেই করা হচ্ছে। জনশক্তি রপ্তানির বিষয়টি দেখে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশি কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ জনশক্তি কর্মসংস্থা ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। বিএমইটি নতুনভাবে প্রশিক্ষণের কারিকুলাম সাজাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণের ওপর জোরও দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এখন দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির বিকল্প নেই। শুধুমাত্র ভাষা জানলেও অনেক কাজ পাওয়া যায়।
অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জাপান ২০২৫ সালের মধ্যে সারাবিশ্ব থেকে ৫ লাখ কর্মী নেবে। জাপানী ভাষা জানলে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই বাজার বাংলাদেশ ধরতে পারে।
প্রসঙ্গত, করোনার ধাক্কা সত্ত্বেও সদ্যবিগত ২০২২ সালে রেকর্ড জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। ১১ লাখের কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশে গেছেন। তবে এসব কর্মীর বেশিরভাগই অদক্ষ এবং গন্তব্য দেশ যথারীতি মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো।
আরইউ/এমএমএ/
