‘আমরা সাধারণ মানুষের উন্নয়নে বিশ্বাস করি’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকলকে স্মরণ রাখতে হবে যে কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল, আর কখন দেশের মানুষ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির কবলে পড়ে নিজের জীবনমানকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা সকলকে স্মরণ করে সেই তুলনা করেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কী চান।
দেশের উন্নয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রম ও পদক্ষেপের তুলনামূলক বিচার করে জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরমার্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৫০টি জেলায় ১০০টি মহাসড়কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি, ধ্বংসই করেছে- তাদেরকে আজকে আমি প্রশ্ন করি, যে ১০০টা মহাসড়কের নামের তালিকা আমরা বললাম। অধিকাংশ আমরা তৈরি করেছি এখন সেগুলো উন্নত করে দিলাম। আর নতুন সড়ক করে দিলাম। ১০০ সেতু একই দিনে উদ্বোধন, ১০০টি সড়ক একই দিনে উদ্বোধন। এটা অতীতে কেউ কখনো করতে পেরেছে? পারেনি। পারে আওয়ামী লীগই। এটাই প্রমাণিত সত্য।’
তিনি বলেন, ‘এরপরও যারা বলে যে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই নাকি করে নাই…তো দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করবে কিনা সেটাই আমার প্রশ্ন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে, আমরা বিশ্বাস করি গণমানুষ যেন ভালো জীবন যাপন করতে পারে সেই ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, মানুষের জীবন মান উন্নত করা, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার প্রসার ঘটানো, উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, ভোকেশনাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা, দক্ষ মানব শক্তি গড়ে তোলা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন মানব শক্তি গড়ে তোলা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে জ্ঞানে এবং দক্ষতায় প্রতিটি বাঙালি যেন সেইভাবে তৈরি হয় সে লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওই মানিলন্ডারিং, অগ্নি সন্ত্রাসকারী অথবা গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ মানুষ হত্যাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতা, এই ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন কেউ যেন এ দেশে না আসতে পারে।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করেনি, স্বাধীনতার চেতনায় যারা বিশ্বাস করে না, যারা জয় বাংলা স্লোগানে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এদেশের কোনো উন্নতিও চায় না।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকতে কী করেছে? আমি আশা করি দেশবাসী অন্তত সেটা একটু বিবেচনা করে দেখবেন। আমি জানি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আমরা প্রাইভেট টেলিভিশন দিয়েছি, রেডিও দিয়েছি, অনলাইন সব ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখন যোগাযোগ। কাজেই সত্য মিথ্যা অনেক কিছু বলা যেতে পারে।
আমরা এ দেশের মানুষকে একটু শান্তি, নিরাপত্তা, উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চাই এবং সেটা আমরা প্রমান করেছি। বারবার ঝড়-ঝাপটা এসেছে আমরা তা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছি এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাব। যোগ করেন তিনি।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা এই দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব এবং সেই স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করবে এবং সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেটা আমরা কিছু বাস্তবায়নও করছি।’
তিনি বলেন, ‘জলবায়ুর অভিঘাত থেকে প্রতিনিয়ত আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এর হাত থেকে রক্ষা করে এ দেশের জনগোষ্ঠীকে একটা উন্নত জীবন দিতে চাই। সেজন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করে আমরা সেটাও বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি এবং এটা চলমানই থাকবে।’
মহাসড়ক উদ্বোধন করে পরিবহন চালকসহ সবাইকে সড়কে চলাচলের নিয়মগুলো মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সেজন্য শিশু-কিশোরদের একেবারে স্কুল জীবন থেকেই শিক্ষা দেওয়ার পরামর্শ এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমি প্রশাসনের সকল স্তরেই বলব যে শুধু স্কুল থেকে এখনই ট্রেনিং দেওয়া না, সাধারণ মানুষকে এই ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। দরকার হলে প্রতিটি জায়গায় সাইন বোর্ড টানিয়ে টানিয়ে বা হাটে-বাজারে বা রাস্তার মোড়ে-মোড়ে এগুলো প্রদর্শন করতে হবে।’
গাড়িচালকদের জন্য মহাসড়কে বিশ্রামাগার তৈরির কথা উল্লেখ করে দুর্ঘটনা কমাতে নির্দিষ্ট সময় পর চালকদের বিকল্প কাউকে রাখা এবং চালকদের বিষয়ে মালিকদের যত্নবান হবার পরামর্শ দেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর চালককে মারধর না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দুর্ঘটনা হলে যিনি দুর্ঘটনাকবলিত, অনেক সময় জনগণ তাকে সাহায্য না করে গাড়ি
এনএইচবি/এমএমএ/
