‘প্রত্যেকের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে’

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার প্রতিটি মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি ব্যক্তির মানবাধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা তা মাথায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় সভাপতির সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন।
যারা মানবাধিকারের কথা বলছেন এবং দূরবীন দিয়ে গণতন্ত্র খোঁজেন,তাদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা (তথাকথিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা) ভুলে গেছেন যে জিয়াউর রহমান দেশে গুম ও হত্যার সংস্কৃতির সূচনা করেছিলেন । মানুষ খুন করে গুম করে ফেলা হত। জিয়াই দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু করেছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তার থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করে দেশে ন্যয় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।
তিনি বলেন, তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা সর্বদা সামরিক স্বৈরশাসকদের সরকার এবং দেশে জরুরি অবস্থাকালিন সময়কে পছন্দ করেন, কেননা সেই তাদের কদর বেড়ে যায়, তারা অগ্রাধিকার পান । আর সেজন্য তারা যেন দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটাই ধ্বংস করতে চান। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয়, তারা দেশে বলবৎ সামরিক শাসনামলেই গণতন্ত্র খুঁজে পান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী, বিষয়টি আসলেই তাই কি না, তাদের খোলাসা করতে বলেন।
জনতাই তার মূল শক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই জনতার শক্তিতে বলিয়ান হয়েই আগামীতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে যে উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, ২০৪১ সাল নাগাদ তা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। কাজেই বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আওয়ামী লীগই দেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করেছে এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল এত ভালোভাবে মানুষের অধিকার রক্ষা করেছে?
করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্ব সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার সংকট কাটিয়ে উঠতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি দেশবাসীকে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে কঠোরতা প্রদর্শন এবং সংকট মোকাবেলায় সঞ্চয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় দলের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার জাতীয় কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডায়াসে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ তাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছে, মানুষ মেনে নেয়নি। এরপর ২০০১ এ সরকার গঠন করে বিএনপি ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করেছে, জনগণ মেনে নেয়নি। সে নির্বাচন বাতিল হয়েছে। বিএনপি, খালেদা জিয়াকে দুই দুই বার ভোট চুরির অপরাধে সরে যেতে হয়েছে।
দেশে গুম খুনের সংস্কৃতির প্রবক্তা জিয়া উল্লেখ করে সে প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, জিয়ার আদেশ পালন করা জেলের জল্লাদরাও অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন যে, কী ঘটে যাচ্ছে এসব? সে সময়ে সাদা মাইক্রোবাসে যাদের তুলে নিয়ে গেছে, তাদের লাশও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। জিয়ার আমলে সেনাবাহিনীতে যে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছে। রাজশাহী-বগুড়া-ঢাকা-খুলনা কারাগারসহ বিভিন্ন কারগারে হিসাব মিলিয়ে দেখবেন শত শত সেনা অফিসার, সৈনিক, বিমানবাহিনীর অফিসার এবং অগণিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। তাদের পরিবার তো লাশই পায়নি। লাশও গুম করে ফেলা হয়েছে। তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়ন কাজের মাধ্যমে জনসমর্থন বাড়িয়েছে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। জনগণের কল্যাণ সাধন করেছে। আজকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই উন্নতি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা তুরে ধরে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলেছি বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নতি করেছে। যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত, দুর্নীতি, দুর্বত্তায়নের ছিল, আজকে সে দেশ গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়। আওয়ামী লীগ একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আছে বলেই সেই পরিবর্তন আনতে পেরেছি।’ সূত্র: বাসস
আরএ/
