বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

জাপান বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উন্নয়ন সহযোগী এবং অকৃত্রিম বন্ধু বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে এবং এখানে বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপসহ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের জন্য বিনিয়োগ কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের বাজার হতে পারে।’
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) জাপান ও বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ স্পেশাল ইকনমিক জোন (জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল) এর উদ্বোধনী বক্তব্যে এ কথা বলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের মান্যবর রাষ্ট্রদূত ইটো নাওকি এবং জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও মাসাইিউকি হাইডো।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে স্পেশাল ইকনমিক জোন স্থাপনের জন্য জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ ও মাতারবাড়িতে পাওয়ার হাব প্রতিষ্ঠায় জাপান সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা জাপান-বাংলাদেশের ৫০ বছরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নিদর্শন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জিটুজি ভিত্তিতে চাইনিজ ও ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে কাজ শুরু হয়েছে এবং সৌদি আরব ও সিংগাপুরের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণে আলোচনা চলমান রয়েছে। এ সকল অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়িত হলে দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পাবে ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জিটুজি ক্যাটাগরিতে প্রথম অর্থনৈতিক অঞ্চল এর ব্যাপারে বলেন, এই অঞ্চলে আনুমানিক দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে। লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রায় ৩০টি জাপানী এবং অন্যান্য দেশের আরও ১০টি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে তুরস্কের সিঙ্গার ও জার্মানীর রুডলফের সঙ্গে বিএসইজেড-এ শিল্প প্রতিষ্ঠায় চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
জাপানের সুমিতোমো কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশে বৃহৎ বাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ কারণে সুমিতোমো অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
উদ্বোধনের পর ২টি জাপানি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় । এগুলো হলোঃ ওনদা করপোরেশন এবং নিক্কা কেমিক্যালস। ওনদা করপোরেশন দেশের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে গ্যাস মিটার এসেম্বলিং ফ্যাক্টরি প্রতিষ্ঠা করবে। এ ছাড়া, নিক্কা কেমিক্যালস বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও কেমিক্যাল প্ল্যান্ট স্থাপন করবে। ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে শিল্প নির্মাণ কাজ শুরু করেছে তুরস্কের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান সিংগার, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জার্মান কোম্পানি রুডলফের সঙ্গে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের পথ চলা শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর ২০১৪ সালে জাপান সফরের সময়। একই বছর জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের বাংলাদেশ সফরের সময় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে জাইকা নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে যৌথ উদ্যোগে জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে ২০১৯ সালে বেজা ও সুমিতমো করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
প্রায় এক হাজার একরের উপর নির্মাণাধীন জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫০০ একর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক, নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। নির্মাণ শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ সড়ক, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। এ পর্যন্ত কোম্পানির অনুকূলে ১৮০ একর জমি বাংলাদেশ স্পেশাল ইকনমিক জোনকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তা শিল্প কারখানা তৈরির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
জেডএ/এমএমএ/
