শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়তে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক এবং সময়োপযোগী যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহ করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদার ও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা কাজ করছি।’
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি (বিএমএ) প্যারেড গ্রাউন্ডে ৮৩তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের কমিশন উপলক্ষে আয়োজিত ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২২’ এ যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে তার সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করছে। আমরা ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিকে যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি, ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। অ্যারোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করতে আমরা সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং বরিশালে ৭ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। গত ৪ বছরে বিভিন্ন ফরমেশনের অধীনে ৩টি ব্রিগেড এবং ছোট-বড় ৫৮টি ইউনিট প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সম্প্রতি মাওয়া-জাজিরাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ রাসেল সেনানিবাস এবং মিঠামইন, রাজবাড়ি ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশনের ফরোয়ার্ড বেস এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সেনাবাহিনীতে নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড যুক্ত করেছি। প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক এবং যুগোপযোগী অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকের দিনটি আপনাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর কাঙ্ক্ষিত কমিশন প্রাপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত অফিসার হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আপনাদের উপর ন্যস্ত হলো দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব আপনারা যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি মনে করি।
শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ড বজায় রেখে ক্যাডেটদের আগামীতে এগিয়ে যাওয়ায় তিনি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে পাসিং আউটে ক্যাডেটদের উদ্দেশে যে বক্তব্য দেন তার উল্লেখযোগ্য অংশ তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের জাতির পিতা হিসেবে আদেশ দিচ্ছি, তোমরা সৎ পথে থেকো, মাতৃভূমিকে ভালোবেসো। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াবা, গুরুজনকে মেনো, শৃঙ্খলা রেখো, তা হলে জীবনে মানুষ হতে পারবা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। আমি আশাকরি আমাদের নবীন ক্যাডেটরা এই কথা মনে রেখে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের ওপর দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্র নীতির প্রসংগে বলেন, আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাইনা। জাতির পিতাই বলে গেছেন সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় এবং আমরা তা যথাযথভাবে মেনে চলেই আমাদের দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে জাতির পিতা বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রূপান্তর করে যান।
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তার সরকার উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নতুন কমিশন প্রাপ্ত ক্যাডেটদের উদ্দেশে বলেন, আজকের যারা নবীন অফিসার তারই হবেন আমাদের ‘৪১ এর সৈনিক এবং তারাই এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেকে গড়ে তুলবেন। লক্ষ্য স্থির রেখে আমরা এগিয়ে যাব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে অত্যাধুনিক সুপারসনিক মিগ-২১ যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, পরিবহন বিমান, এয়ার ডিফেন্স রাডার ইত্যাদি বিমান বাহিনীতে যুক্ত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালেই একটি প্রতিরক্ষানীতি প্রণয়ন করেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগেই সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীতে দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে মহিলা অফিসার নিয়োগ এবং মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হয়। তার পরিবারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশেষ যোগসূত্রের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিকে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও অত্যাধুনিক একাডেমিতে পরিণত করার লক্ষ্যে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘বিশ্বের মানুষ একদিন এই মিলিটারি একাডেমিকে দেখতে আসবে।’ উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে বঙ্গবন্ধু যে মিলিটারি একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই বাস্তবায়িত রূপ আজকের এই একাডেমি। এখানে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণের সকল প্রকার অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’সহ বিবিধ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিএমএতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া অমূল্য ও দূরদর্শী ভাষণ প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বিএমএ প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান, আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (এআরটিডিওসি) এর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি), বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম এরিয়া কমান্ডার এবং ২৪ তম পদাতিক ডিভিশন জিওসি এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট তাকে স্বাগত জানান।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে সুসজ্জিত অভিবাদন মঞ্চ থেকে অভিবাদন গ্রহণ করেন এবং চিত্তাকর্ষক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন।
খোলা জীপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং বিএমএ কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল এস এম কামরুল হাসান।
অনুষ্ঠানে উত্তীর্ণ ক্যাডেটরা আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। সার্বিক বিষয়ে চৌকষ সাফল্যের জন্য ৮৩ তম বিএমএ দীর্ঘ মেয়াদি কোর্সের ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার লাবিব জোহাইর নূর আনান প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে ‘সোর্ড অব অনার’ এবং সেনাবিষয়ে সর্বোচ্চ সাফল্যের জন্য এসএম জহিরুল ইসলাম নিলয় ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।
এনএইচবি/এমএমএ/
