শেখ রেহানাকে মানবাধিকার কমিশন ও ন্যায়পালের দায়িত্ব দিন: জাফরুল্লাহ
শেখ রেহানাকে মানবাধিকার কমিশন ও ন্যায়পালের দায়িত্ব দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য ট্রাস্ট্রিবোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি মানববন্ধনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'সর্বত্র অনাচার দুর্নীতি। সম্ভবত আপনার বুঝার সময় এসেছে। আপনার পদত্যাগ করা উচিত। এসব জায়গায় আপনার ছোট বোন শেখ রেহানাকে যুক্ত করুন। শেখ রেহানাকে কোনো কাজ দিচ্ছেন না। অন্তত তাকে মানবাধিকার কমিশন, ন্যায়পালের দায়িত্ব দেন। আমরা দেখি তিনি কী করেন? কাজ শিখতে দেন, তা না হলে আপনার যত সব অনাচার, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের যে অবস্থা এরজন্য একটা না একটায় আপনাকে মুখোমুখি হতে হবে। যেমন টিকা কত দিয়ে কেনা হচ্ছে তা সংসদকেও জানান না। সংসদকে অপমান করেছেন। এই সবের জন্য আমার মনে হয় আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, আপনার বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। বিশ্রাম নেন, শেখ রেহানাকে দায়িত্ব দেন।'
'তবে আপনি একটি কাজ করতে পারেন। যেভাবে ইতিহাসে অমর হবেন, যে গণতন্ত্র আপনার সময়ে কবরে গেছে সেই গণতন্ত্রকে কবর থেকে উঠিয়ে আনেন। আপনি দায়িত্ব দেন দেশে গণতন্ত্র ফেরত আনা, ভোটের অধিকার ফেরত আনা।'
তিনি বলেন, 'সত্যিকারভাবে যদি শেখ মুজিবকে সম্মান করতে চান। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করতে চান তাহলে উচিত হবে একটা জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা। জাতীয় সরকার গঠন করে সমস্ত অনাচার বন্ধ করা। জাতীয় সরকার ছাড়া এখানে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। জাতীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন কোনোক্রমেই গণতান্ত্রিক হবে না। জনগণের অধিকার আদায় হবে না।'
উন্নয়নের সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'আইয়ূব খান উন্নয়ন সার্টিফিকেট পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে তার পতন হয়। এইদিনে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেছিলেন, কাজেই একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, তার আমলে ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে ৩ লাখ লোক অনাহারে মারা গিয়েছিল। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) আমলে মারা যায় না কিন্তু পুষ্ঠিহীনতায় ভোগছে। আপনার শাসনামলে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা গণতন্ত্র কবরে গেছে। ভোট হয় না, মানুষ ভোট দিতে পারে না। দেশ গণতন্ত্রহীন। এখন আপনার অবস্থা এতো খারাপ যে, পশ্চিম দিগন্তে আপনার বিরুদ্ধে ডঙ্কা বাজতে শুরু করেছে। সেটাকে থামানোর জন্য দালাল নিয়োগ করেছেন। দালালরা সত্যকে চাপা দিতে পারে না। অর্থ ব্যয় হবে।'
বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'গত দুইদিন ধরে দেখছি বিএনপি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে কথা বলছেন। তারা বলছেন সরকার ভিন্নমত ও বিরোধীদল দমনে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ব্যবহার করছে। অথচ তারা (বিএনপি) একবারও বললেন না যে তারা ক্ষমতায় আসলে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন উঠিয়ে দেবেন। তাদের ঘোষণা দেওয়া উচিত যে, তার আমলে ডিজিটাল আইন প্রত্যাহার হবে। বঞ্চিতদের অধিকার দেওয়া হবে। কেবল হাসিনা খারাপ তা বলে লাভ নাই বরং আপনারা কী কী পরিবর্তন করবেন তা ঘোষণা দেন। আপনারা একলা কিছুই করতে পারেবেন না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় নামুন।'
'আজকে কোর্টেও অন্যায় হচ্ছে, বিচার কার্যক্রম অনুসারে বিচারক নিয়োগ হচ্ছে না। যিনি প্রধানবিচারপতি হওয়ার কথা তিনি হতে পারেননি। তিনি ছুটিতে গেছেন, অথচ তার পদত্যাগ করা উচিত ছিল।'
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, 'মাননীয় রাষ্ট্রপতি আপনাকেও ওই হিসাবে জবাব দিতে হবে। আপনার কাঁধে বন্দুক রেখে হাসিনা ফায়ার করছেন। মনে করবেন না যে, বিচার কেবল আমার প্রধানমন্ত্রীর হবে, বিচার আপনারও হবে। অনাচারের বিচার হবে। আপনি সংলাপের নামে অর্থের অপচয় করছেন। আপনার কিছুই করার ক্ষমতা নাই।'
'প্রধানমন্ত্রী আপনার সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি, আপনার মেয়ে জামাইকেও কিন্তু কানাডায় ঢুকতে দেয়নি। এগুলো আপনার স্মরণ রাখা উচিত। পদত্যাগ করুন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাস্তায় নেমে আমাদের সঙ্গে শরীক হোন। তা না হলে একদিন আপনাকেও কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।'
এমএইচ/টিটি