আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ভয়ংকর বার্তা

আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ভালো লক্ষণ নয়। আদালতে পুলিশের চোখে-মুখে স্প্রে মেরে জঙ্গিদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা সত্যিই ভয়ংকর।
আদালতের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভয়ংকর জঙ্গিদের এতো সাদামাটা নিরাপত্তা দিয়ে আদালতে নেওয়াটা সঠিক হয়নি। তারা বলছেন, আগে থেকে কেনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা না নেওয়ায় জঙ্গিরা পালানোর সুযোগ পেয়েছে। এখন দুই জঙ্গিকে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিকে দুই জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার পর আদালতে সব ধরনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যের পাশাপাশি সোয়াতসহ বিভিন্ন বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।
অপরদিকে, জঙ্গিরা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ধরতে পুলিশ রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করা হবে। ইতোমধ্যে তাদের ধরতে ২০ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও কথা বলেছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে সারাদেশের আইনী নিরাপত্তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। জঙ্গিদের আদালতে আনার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল। এমন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনোভাবেই দায়ভার এড়াতে পারবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, আদালত হলো দেশের মানুষের আস্থার জায়গা, সেখান যদি নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকে এবং কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপরই পড়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অপরাধ বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, পুলিশের সামনেই আদালত থেকে আসামি ছিনতাই করে নিয়ে গেল জঙ্গিরা, এটা আসলেই দুঃখজনক ব্যাপার। এর দায়ভার প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এড়িয়ে যেতে পারে না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, আসামিরা দুজনই আনসার আল ইসলামের সদস্য। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এই দুই আসামি সবার সামনে থেকে পালিয়ে গেল এটা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার। প্রসাশনের আগে থেকেই অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার ছিলে।
ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, পুলিশকে স্প্রে করে আগে থেকে প্রস্তুত একটি মোটরসাইকেলে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যায় জঙ্গিরা। মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন একজন চালক। এই ঘটনার পর আদালত প্রাঙ্গণ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানতে চাইলে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কোর্টে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন জঙ্গি সদস্যের হাজিরা ছিল। এই তথ্যটি আমরা যদিও পরে পেয়েছি। আগে থেকে জানলে এমন ঘটনা ঘটত না।
কেএম/এনএইচবি/আরএ/
