কপ ২৭: অস্ত্র না কিনে টাকা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়ার আহ্বান

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়া চলমান যুদ্ধে অস্ত্র কেনায় যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে সেই অর্থ যদি জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে দেওয়া হতো তাহলে মানুষের উপকার হতো।
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কেন্দ্রের (কপ-২৭) বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে বসে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে আলাপকালে আতিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সম্মেলন কেন্দ্রের ইউএস সেন্টারে গিয়ে বলেছি, চলমান যুদ্ধ বন্ধ করুন। অস্ত্র কেনার ফান্ড জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যয় করুন। দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে অন্য দেশগুলোও নানান ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। আমরা এখন পুরো পৃথিবীকে গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে চিন্তা করছি। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে গোটা বিশ্ব নানান ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। একটি যুদ্ধই ক্ষতিগ্রস্ত করে দিচ্ছে অনেককে। দেশে দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে।
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ হয়েও বাংলাদেশে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। কম কার্বন নিঃসরণ করা দেশগুলো আজ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশের যে প্রতিশ্রুতি ছিল সে বিষয়টি এবারের সম্মেলনে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না। আমাদের উপকূলের মানুষ বাস্তুভিটা হারাচ্ছে, খাবার পানি পাচ্ছে না, লোকালয় পরিবর্তন করে শহরগামী হচ্ছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ২৭টি জলবায়ু সম্মেলন হলো। আমরা কি শুধু কথার ফুলঝুরি শুনেই যাব? নাকি আমরা কিছু কাজও করব?
তিনি বলেন, ক্লাইমেট জাস্টিস নিয়ে আমাদের গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। উন্নত দেশগুলো ক্লাইমেট চেঞ্জ, অ্যাডাপটেশন, মিটিগেশন, টেকনিক্যাল সাপোর্ট ও ফিন্যানসিয়াল সাপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। উন্নত দেশগুলো কি তাদের সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে? তারা যদি প্রতিশ্রুতি না রাখতে পারে তাহলে এত সম্মেলন কেন? ভবিষ্যতে আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রশ্নের সম্মুখীন হব যে, কেন কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে জলবায়ু সম্মেলনে গিয়েছি, এর আউটকাম কী ছিল?
এসময় তিনি বলেন, বিশ্বের ৪০ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ফোরাম সি-৪০ পক্ষ থেকে আমরা আরেকটি প্রস্তাব সম্মেলন উত্থাপন করব। আমরা চাই শস্য বিমা চালু করা হোক। এতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপকৃত হবেন। এই যে কিছুদিন আগে আমাদের সিত্রাং হয়ে গেল, তাতে আমাদের বহু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বহু মানুষ বাস্তভিটা হারা হয়েছে, বহু মানুষ গবাদি পশু হারিয়েছে। বহু খামারের মাছ ভেসে গেছে। আমাদের এমন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতিতে আত্মীয়তার কোনো সুযোগ নেই। শস্য বিমা চালু হলে কৃষক উপকৃত হবে। আমরা এই শস্য বিমা চালুর জোর দাবি তুলব সি-৪০ এর পক্ষ থেকে।
এদিকে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বুধবার (১৬ নভেম্বর) তিনটি সেশনে আলোচনা হয়। এসব সেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, একই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী অংশ নেন।
এদিকে বুধবার মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত এবং অবকাঠামো ও পানি ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ডাচ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন।
বৈঠকে ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য অর্থ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে অভিযোজনে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করার ব্যাপারে ভাবতে হবে। স্ব স্ব দেশগুলো এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্তে আসতে একমত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মার্কিন প্রতিনিধির সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি- ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আমাদের পাওনা দিতে হবে। এতে কোনো অজুহাত চলবে না। পাশাপাশি তারা জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রিড নেটওয়ার্কের জন্য আমাদের সহায়তা করায় ধন্যবাদ জানিয়েছি। মার্কিন প্রতিনিধি জানিয়েছেন- তারা জলবায়ু ঝুঁকির জন্য গ্লোবাল শিল্ড তৈরির কাজ দ্রুত শুরু করবেন।
গত ৬ নভেম্বর থেকে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৭) শুরু হয় মিশরের পর্যটন নগরী শার্ম আল শেখে। দুই সপ্তাহ ব্যাপী এই সম্মেলন আগামীকাল ১৮ নভেম্বর (শুক্রবার) শেষ হওয়ার কথা।
এসএন
