কপ-২৭: উন্নয়নশীল দেশগুলোর সম্বল হতাশা এবং প্রতিশ্রুতি!

বিশ্ব জলবায়ুর সম্মেলন (কপ-২৭) শেষের দিকে। আর মাত্র দুই দিন বাকি। প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী সম্মেলন চললেও এখন পর্যন্ত কোনো আশার খবর নেই। জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা উন্নত রাষ্ট্রগুলো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর কোনো কথাতেই খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। শুধু প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে উন্নত রাষ্ট্রগুলো। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে।
এলডিসি মুক্ত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো বলছে, লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থায়নের বিষয়ে এই কপ-এ ঘোষণা দিতে হবে। কিন্তু এই ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। একইভাবে প্রশমন (মিটিগেশন) ও অভিযোজনের (অ্যাডাপটেশন) বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত আসেনি। শুধু আলোচনার পর আলোচনা চলছে।
দীর্ঘদিন জলবায়ু নিয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশের সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হান্নান। বর্তমানে তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) হয়ে কপ-এ যুক্ত আছেন।
তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের সুযোগে উন্নত রাষ্ট্রগুলো এখন নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত। উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা শোনার সময় তাদের নেই। লস অ্যান্ড ড্যামেজ এর অর্থায়নের বিষয়টি এবারও উপেক্ষিত হচ্ছে উল্লেখ নিজের অসন্তুোষ প্রকাশ করেন মনজুরুল হান্নান।
তিনি বলেন, উন্নত রাষ্ট্রগুলো শুধু সময়ক্ষেপণ করছে। তাই এবারের কপ-এ লস অ্যান্ড ড্যামেজ এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে কি না আদৌ বলা মুশকিল। কারণ, সম্মেলনের আর মাত্র দুই দিন আছে। কিন্তু অগ্রগতি নেই।
কপ-এ বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য এবং জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী বুধবার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এখন পর্যন্ত আসার কোনো খবর নেই। এলডিসি ভুক্ত ৪৬টি দেশের পক্ষ থেকে আমরা উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার করছি। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোকে বলেছি ড্যামেজ এর অর্থায়নের বিষয়ে এবারের কপ-এ একটা ঘোষণা দিতে হবে। তার আলোকে আগামি দুই বছর ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির কাজ চলবে। কীভাবে তহবিলটি গঠন হবে, অর্থায়ন হবে কোথা থেকে এসব বিষয়ে কাজ চলবে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ৪৬ টি দেশের ফোরাম এলডিসি জলবায়ু তহবিল, মিটিগেশন নিয়ে আলোচনা করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা এখন কপ প্রেসিডেন্সির সঙ্গে নেগোশিয়েট করব যে,ফাইনাল টেক্সটি কী হয়।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত লস অ্যান্ড ড্যামেজে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নীতিগত ভাবেও তারা এটি মেনে নেয়নি।
তিনি বলেন, এই কপ-এ আমরা একটা ঘোষণা চাই যে, লস অ্যান্ড ড্যামেজ এর ব্যাপারে একটা স্বতন্ত্র এবং সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠন করা হচ্ছে। এটা হচ্ছে ঘোষণা। এরপর আগামী এক বছরের মধ্যে এটার কাঠামো কি হবে তা তৈরি করাসহ অন্যান্য বিষয়ে কাজ হবে। তবে ঘোষণাটা এ বছরে আসতে হবে।
তিনি আরও জানান, এই বিষয়ে কপ প্রেসিডেন্সি জার্মানির জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী এবং চিলির একজন মন্ত্রী গ্রোসাসকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা এলডিসি ও জি-৭৭সহ বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে বসবে। তারপর কপ প্রেসিডেন্সি কে রিপোর্ট করবে।
বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। আমরা সেখানে এলডিসির পক্ষ থেকে আমাদের অবস্থান তুলে ধরব। এখানে একটা বিষয় বলে রাখি, লস অ্যান্ড ড্যামেজ বিষয়ে এলডিসি এবং জি-৭৭ এর অবস্থান অভিন্ন। আমরা দুইজনই একই জায়গায় আছি।
মোট ৪০ সিটির মেয়রদের ফোরাম সি-৪০ যে জলবায়ু বিমার প্রস্তাব তুলেছে, বা শস্য বিমার কথা বলছে এ বিষয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এইটা কপ এর মূল আলোচনার বিষয় নয়। এটা বাইরের একটা প্রস্তাব। তবে কবি ইতিবাচক। এটা কপ-এর ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যেও আসবেনা। এটা হয়তো আলাদাভাবে একটা ফান্ডিং মেকানিজম করবে।
এদিকে স্থানীয় দুপুর ১২ টার দিকে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নে একটি সাইট ইভেন্টে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থরা কীভাবে জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা পেতে পারে এর উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
ড. সালিমুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিন আহমেদ, ইউনেস্কো সেন্টারের ওয়াটার ল অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন রোয়ান। মডারেটর ছিলেন আইওএম অধ্যাপক মিজান আর খান। ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেইঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ (সিথ্রিইআর) কোঅর্ডিনেটর রউফা খানম।
এমএমএ/
