কপ-২৭: চলছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দরকষাকষি

বিশ্ব জলবায়ুর সম্মেলনের ১০তম দিনে তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা চলছে। লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থায়ন, মিটিগেশন বা প্রশমন এবং অ্যাডাপটেশন বা অভিযোজনের বিষয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর চরম দরকষাকষি চলছে।
অপরদিকে, এবারের সম্মেলনে উন্নত রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের কাছে উন্নয়নশীল বা ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর সমস্যা বা সংকট ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। উন্নত রাষ্ট্রগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি (রিনিউএবল এনার্জি) বিনিময় এর উপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্ব নবায়নযোগ্য জ্বালানি ট্রান্সফারের দিকে বেশি ঝুঁকছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলো এই বিষয়ে বেশি সোচ্চার।
নবায়নযোগ্য জ্বালানোর বিষয়টি কীভাবে করা যায় অর্থাৎ গবেষণা বাড়ানো ও কারিগরি উন্নয়নের দিকে তারা বেশি মনোযোগী।
অথচ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির শিকার রাষ্ট্রগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষ করে লস অ্যান্ড ড্যামেজে অর্থায়নের বিষয়টি অপেক্ষিত থেকেই যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদে কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি হচ্ছে লস এন্ড ডেমেজের অর্থায়ন, প্রশমন ও অভিযোজনের বওষয়টি। আমরা এ তিনটির উপর জোর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে এলডিসিভুক্ত ৪৬টি দেশ জোরালোভাবে এই তিনটি বিষয়ের উপর আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।’
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর জন্য গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের যে প্রতিশ্রুতি উন্নত রাষ্ট্রগুলো দিয়েছিল তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। বলা যেতে পারে উন্নত রাষ্ট্রগুলো কথা দিয়ে কথা রাখেনি। ২০২২ সাল পর্যন্ত এই তহবিলে জমা পড়েছে ১১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডলার জমা দেওয়ার প্রয়োজন থাকলেও উন্নত রাষ্ট্রগুলো সেটি করেনি।
এর ফলে লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থায়নের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলো যে দাবি তুলেছে তা এখনো এবারের কপ এর মূল আলোচনায় তেমনভাবে গুরুত্ব পায়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তাদের নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। ফলে অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্র লস অ্যান্ড ড্যামেজের অর্থায়নের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যা ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ১০০ মিলিয়ন দেওয়ার কথা ছিল ২০০৯ সালের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী। এই বিষয়ে আজ পর্যন্ত তেমন অগ্রগতি হয়নি।
তিনি বলেন, বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়া জন কেরি পরিষ্কার বলেছে, যে পরিমাণ অর্থের দরকার, উনত বিশ্বের কাছে সেই পরিমাণ অর্থ নাই।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, লস অ্যান্ড ড্যামেজের ফান্ডিং এর ব্যাপারে এখনো একমত হওয়া যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তন জনিতকারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর দাবি, এবারের সম্মেলনে এ ব্যাপারে একটা ফ্রেমওয়ার্ক করতে হবে। কীভাবে ফান্ডিং হবে সেটা আগামী দুই বছরের মধ্যে করা যাবে।
তবে উন্নয়নশীল দেশগুলো বলছে, এখন নয়,২০২৪ এর মধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা হবে। জিয়াউল হক জানান, লস অ্যান্ড ড্যামেজের পাশাপাশি গ্লোবাল মিটিগেশন অ্যাকশন প্ল্যান, মিটিগেশন এবং কার্বণ নিঃসরণ কমানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
গত ৬ নভেম্বর থেকে মিশরের পর্যটন শহর শার্ম আল শেখ-এ শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন (কপ-২৭)। প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার পর এখন সম্মেলনের শেষ দিকের চূড়ান্ত আলোচনা চলছে। আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এই সম্মেলন চলবে।
এমএমএ/
