সংকটেও পরামর্শক, বিদেশ প্রশিক্ষণে ব্যয় বৃদ্ধি

বৈশ্বিক সংকটের ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। এজন্য বিদেশ ভ্রমণসহ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করতে নিষেধ করেছে সরকার। তারপরও ব্যয় বাড়ছে পরামর্শক ও বিদেশে প্রশিক্ষণ খাতে। কিন্তু কাজের পরিমাণ কমছে। শুধু তাই নয়, লোকবলের জন্য থোক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এটি যেনতেন কোনো প্রকল্প নয় ১০ সিটি করপোরেশন ও ১৭টি পৌরসভার ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে `আরবান প্রাইমারি হেল্থ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি’ প্রকল্পের বাস্তব চিত্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
শহর এলাকায় স্বল্প আয়ের মানুষ ও বস্তিবাসী বিশেষ করে শিশু, মহিলা ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থে ২০১৮ সালে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার পর সরকার ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ ১০টি সিটি করপোরেশন ও তারাবো, গোপালগঞ্জসহ ২০টি পৌরসভার দরিত্র ও বস্তিবাসীর স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের জন্য এতে সরকার অনুমোদন দেয়।
এডিবির ঋণে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রকল্পটি। তারপরও ঠিক মতো হচ্ছে না প্রকল্প বাস্তবায়ন। বরং কাজ কমিয়ে সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল ডিপিপিতে ছয়তলা বিশিষ্ট ৮টি নগর মাতৃসদন ও তিন তলা বিশিষ্ট ২০টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংস্থান ছিল। কিন্তু সংশোধিত ডিপিপিতে নগর মাতৃসদন ঠিক রাখলেও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে ১৭টি রাখা হয়েছে। সময় বৃদ্ধি করা হচ্ছে এক বছর তিন মাস। অর্থাৎ মূল প্রকল্পে বাস্তবায়নকাল ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত।
কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে কাজের অগ্রগতি খুবই কম হয়েছে। জুন পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৩৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ও বাস্তব অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। তাই বাকি কাজ শেষ করতে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া, বেসরকারি খাতের লোকবলও বেশি করে ধরা হয়েছে। তাতে থোক বরাদ্দ বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
এভাবে কয়েকটি খাতে বেশি করে ব্যয় ধরা হয়েছে। এক হাজার ১৩৫ কোটি থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকা। বেশি ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা বা ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে এডিবির ঋণ হচ্ছে ৯৫২ কোটি টাকা, বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করা হবে।
অথচ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সংকটের কথা বিবেচনা করে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেছেন। খুব প্রয়োজন না হলে কোনো ব্যয় করতে নিধেষ করেছেন।
তা আমলে নিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় ১০ নভেম্বর এক পরিপত্রে উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিদেশ সফর বন্ধ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, করোনা–পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ ও ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে।
সূত্র জানায়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) অর্থে ২০১৮ সালের ৪ মে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এরপর প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তাতে প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যান্যদের জন্য ৪টি জিপ গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি টাকার বেশি। পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ৯ কোটি টাকার বেশি। মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল ইক্যুমমেন্ট ১৭ কোটি টাকা।
তারপরও দীর্ঘ সময়ে সব কাজ হয়নি। বর্তমানে কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ন সচিবেএ এফ এম আলাউদ্দিন খান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কিছু কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি কম হয়েছে। না দেখে আন্দাজি ভাসা-ভাসা তথ্য বলা যাবে না। সব কাজ শেষ করতে সংশোধন করে সময় বাড়ানো হচ্ছে। কিছু জানতে হলে অফিস সময়ে আসতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুয়াযী অর্থ কাটছাঁট করা হচ্ছে। গাড়ি কেনার অর্থ কমানো হচ্ছে। পরামর্শক ফি বৃদ্ধির ব্যাপারে বলেন, তারা কাজ করলে বেতন তো দিতে হবে। বৈদেশিক ভ্রমণের ব্যপারে বলেন, ‘ডিপিপিতে প্রস্তাব থাকতেই পারে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হলে তা যাচাই-বাচাই করতে রবিবার (১৪ নভেস্বর) প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্টিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে তা সংশোধন করতে বলা হয়েছে। সংশোধিত ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
জেডএ/এমএমএ/
