কপ-২৭: চলছে জোরালো আলোচনা, বাংলাদেশের ৫ দাবি

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের (কপ-২৭) দ্বিতীয় সপ্তাহে সোমবার (১৪ নভেম্বর) থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে জোরালো আলোচনা শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তা পর্যায়ে টেকনিক্যাল বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা এবং প্রথম পর্যায়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক শুরু হয়েছে।
আগামী ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের এই বৈঠক চলবে বিভিন্ন ইস্যুতে। এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া, আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার, দুইদিন, হাই লেভেল সেগমেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। এসব বৈঠকে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা নিজ নিজ দেশের অবস্থান তুলে ধরবেন।
সম্মেলনে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গিয়েছে। গত ছয় নভেম্বর মিশরের পর্যটন নগর শার্ম আল শেখ-এ শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭।
রবিবার (১৩ নভেম্বর) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। একদিন বিরতি দিয়ে আজ সোমবার (১৪ নভেম্বর) থেকে নতুন সপ্তাহের আলোচনা শুরু হয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো আরও অনেকগুলো দেশ রয়েছে যারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব দেশের সমন্বয়ে গঠিত স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ভুক্ত ৪৬ দেশের প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী পর্যায়ে বাংলাদেশ একাধিক ইস্যুতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সংষ্টিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ১০০ বিলিয়ন জলবায়ু অর্থায়ন, অভিযোজন অর্থায়ন, জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা, ২০২৫ সাল থেকে নতুন কালেকটিভ গোল নির্ধারণে প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ১০০ বিলিয়নের উপরে আরেকটি তহবিল গঠনের আলোচনা শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী।
বাংলাদেশ প্রতিনধি দলের টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচারলক জিয়াউল হক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, গত কপ-এ বলা হয়েছিল মিশর কপ-এর আগে কানকুন চুক্তি অনুযায়ী, (যা পরবর্তিতে প্যারিস চুক্তিতেও রিভাইজ করা হয়) ১০০ বিলিয়ন অর্থ মোবিলাইজ করবে। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি।
তিনি জানান, একইভাবে গত কপ-এ সিদ্ধান্ত হয়েছিল অভিযোজন অর্থায়ন ডাবল করা হবে। এ বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোন অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।
এ নিয়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। গত শনিবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই অসন্তোষ প্রকাশ করেন পরিবেশবান ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান সাবের হোসেন চৌধুরী।
এলডিসি ভুক্ত দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা পরিষ্কার করা দরকার। এই অর্থই হবে ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট (অডিএ) নামে। যা হবে সরকার অর্থায়ন। এর আওতায় অর্থ দিতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারণে অর্থায়ন ও মিটিকেশনের বিষয়েও নেতৃত্ব দিচ্ছেন
সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি আজ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ দাবি জানান।
এ ছাড়া, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী ২০২৫ সাল থেকে নতুন কালেক্টিভ গোল এর আওতায় জলবায়ু তহবিল নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো বলছে, আমাদের দাবি হচ্ছে ট্রিলিয়ন। কিন্তু আমরা বাস্তব অবস্থা বুঝি। তাই আমরা বলছি, ২০২৫ সালে নতুন কালেকটিভ গোলে অর্থায়নের পরিমান করতে হবে কমপক্ষে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এখন এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গত কপ-এ মিটিগেশনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড ৪৫ শতাংশ কমানোর। এজন্য এবারের কপ-এ গ্লোবাল মিটিগেশন অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদন করা হবে। এটা নিও এবারের কপে জোরালোভাবে আলোচনা চলছে।
এদিকে, একটি সেশন শেষ করে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের জানান, পরিবেশ রক্ষায় আমরা মূলত পাঁচটি দাবি জানিয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-যেসব রাষ্ট্র কার্বন নিঃসরণ বেশি করছে তাদের গ্লোবাল ওয়ার্মিং কমিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে; প্যারিস চুক্তিতে যারা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের ভবিষ্যতে নয়, খুব শিগগিরই এই অর্থায়ন দিতে হবে; ক্লাইমেট চেঞ্জের কারণে অভিবাসীদের ক্ষতিপূরনের পাশাপাশি অভিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা রিনিউএবল এনার্জি, গ্রিন এনার্জি চাই। কিন্তু এর জন্য যথেষ্ট প্রযুক্তি আমাদের নেই। এ জন্য উন্নত দেশগুলোর কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়েছি আমরা।’
এমএমএ/
