রিজার্ভ নিয়ে অপপ্রচার করছে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিজার্ভ নিয়ে টানা অপপ্রচার করে যাচ্ছে বিএনপি। তাদের সময়ের ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন রিজার্ভ আওয়ামী লীগ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করে।
শনিবার (১২ নভেম্বর) গণভবনে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভের টাকা কেউ তুলে নিয়ে যায়নি। বিএনপি এমনটা ভাবতে পারে, কারণ মানিলন্ডারিং তাদের অভ্যাস। দেশের অর্থ অপচয় করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। মানুষের জন্যই রিজার্ভের টাকা খরচ করা হচ্ছে; টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি, গিলেও খায়নি, নিয়েও যায়নি। রিজার্ভ যা খরচ করেছি জনগণের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে। বর্তমান সরকার দেশের মানুষের জন্য দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, করোনার আঘাত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে। মনে রাখতে হবে, আমরা করোনার ভ্যাকসিন কিনে এনেছি। বিনাপয়সায় টেস্ট করিয়েছি, টিকা দিয়েছে। কোনো উন্নত দেশও বিনা পয়সায় টেস্ট করেনি, ভ্যাকসিনও দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্যশস্য, জ্বালানি তেলসহ এখনো অনেক পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। যা কিছু আমদানি করতে হচ্ছে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় ফোন পেলাম। বললো, আপা আপনার জন্য ইলিশ পাঠিয়েছি। সাড়ে ৭টায় ম্যাসেজ পেলাম, সাড়ে ৯টায় ইলিশ চলে আসল। এটা হলো সড়ক যোগাযোগটা সহজ হওয়ার কারণে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি নিজেরা চুরি করে অর্থ সম্পদ বানিয়েছে। জিয়া মারা যাওয়ার সময় একটা সুটকেস ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকা। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা হয়েছে, একারণে তাদের মুখে সমালোচনা মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বদলে গেছে। একজন মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না আমরা বলেছি। যত টাকা, সব আমরা মানুষের কল্যাণে খরচ করছি। করোনায় সহায়তা দিয়েছি। প্রণোদনা দিয়েছি। মালিকদের হাতে না দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিকদের হাতে দিয়েছি। কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি। মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি।
আসন্ন বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ফসল উৎপাদন করতে হবে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি বক্তৃতায় একথা বলি। পৃথিবীর কোথাও দুর্ভিক্ষ হলেও বাংলাদেশে যেন ধাক্কা না লাগে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে দিচ্ছি চলাচল ও পরিবহন সহজ হয় যাতে। নৌ, সড়ক, আকাশপথ সহজ করেছি। এগুলো আকাশ থেকে পড়েনি। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের পর প্রায় ৪ বছর আগে ২৪ কিলোমিটার ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ করার কথা ছিল। তবে চীনা কর্তৃপক্ষ ঋণ অনুমোদনে বিলম্ব করায় নির্মাণকাজ শুরু করা যায়নি।
গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য খসড়া ঋণ চুক্তির অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, চীনা এক্সিম ব্যাংক এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। মোট ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয়ের ৬৫ শতাংশ দেবে চীন।
এই এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও ইপিজেডকে যুক্ত করবে। এ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের ক্ষেত্রে যানবাহনগুলোকে টোল দিতে হবে বলে প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরুর পর ৪ বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায় প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এসএন
