‘বঙ্গবন্ধুর মতো এমএন লারমাকেও ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেভাবে ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে যেভাবে হত্যা করা হয়, তেমনি মানবেন্দ্র নারায়ণ (এমএন) লারমাকেও ঠিক তেমনি ভাবে নিহত হয়েছেন, বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।
তিনি আরও বলেন, এমএন লারমা পাহাড়ের সমস্যা নিরসনে ৭২ সনে গণপরিষদে তুলে ধরেছেন। এখনও যদি তার বক্তব্যগুলোর দিকে তাকানো হয়, দেখা যাবে তিনি সমস্যা নিরসনের কথা বলেছেন।
শেষ পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমস্যার নিরসনের সেই উপলব্ধির জায়গাতে আনতে পেরেছিলেন। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাহাড়ের সমস্যা নিরসন হয়নি।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের লড়াকু ও সংগ্রামী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ (এমএন) লারমার ৩৯তম মৃত্যুবার্ষিকীর এক আলোচনা সভাতে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, পাহাড়ের সমস্যা নিরসনে মানবেন্দ্র নারায়ণ (এমএন) লারমার যে রাজনৈতিক সমাধানের পথে শান্তি চুক্তি পর্যন্ত এগিয়েছিল, সেই রাজনীতির পথ ধরে এগোতে হবে। তাহলে পাহাড়ের আর কোন সংকট থাকবে না।
অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামালের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. সৌরভ সিকদার, ঊষাতন তালুকদার, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বজলুর রশীদ ফিরোজ, সোহরাব হাসান, কাজল দেবনাথ, জাকির হোসেন, ডা. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো প্রমুখ। এর আগে শোক প্রস্তাব পাঠ ফারহা তানজিম ভিভিল।
আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম. এন) লারমার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, ঐক্য ন্যাপ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাসদ, জাসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, কাপেং ফাউন্ডেশন, এএলআরডি, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, আরডিসিসহ অন্যন্য সংগঠন।
প্রসঙ্গত, ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার বুড়িঘাট মৌজা মাওরুম নামক গ্রামে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) জন্মগ্রহণ করেন। এমএন লারমা জুম্মজাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র জীবন থেকেই আপসহীন ছিলেন। তিনি কাপ্তাই বাঁধের বিরোধিতা করে ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৬৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন। ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এমএন লারমা।
১৯৭২ সালে তার উদ্যেগে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৮৩ সালের আজকের এই দিনে তৎকালীন শান্তি বাহিনীর প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান পাহাড়ের এই নেতা। পাহাড়ের মানুষ এই শোকাবহ দিনটিকে ‘জুম্ম জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালন আসছে।
এমএমএ/
