সকলের অংশগ্রহণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করা সম্ভব

জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পভিত্তিক নয়, কর্মসূচিভিত্তিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাউকে বাদ দিয়ে নয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে বলে অভিমত দিয়েছেন বক্তারা।
রাজধানীতে এক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা বলেছেন, পচনশীল বর্জ্য শহুরে জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তুলেছে। কঠিন বর্জ্যের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ।
বুধবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ‘টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: অংশীজনের সম্পৃক্ততা, শিখন ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা জানানো হয়।
ইউএসএআইডি ও কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল (সিপিআই)’র সহযোগিতায় দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে), বারসিক, ইনসাইটস ও কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর (কাপ) এই সভার আয়োজন করে। ডিএসকে নির্বাহী পরিচালক ডা. দিবালোক সিংহের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ইউএসএআইডি’র প্রতিনিধি ক্রিস্টিন ম্যাক্রি। আলোচনায় অংশ নেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, সিপিআই’র চিফ অব পার্টি মাইনউদ্দিন আহমেদ, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিখা চক্রবর্তী ও আমেনা বেগম, গবেষক আমিনুর রসুল, কাপ নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত প্রমুখ। সভার শুরুতে একটি ধারণাপত্র উত্থাপন করেন সানজিদা জাহান আশারাফী।
সভায় এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের সঙ্গে শিল্পায়ন বাড়ছে। এ থেকে বর্জ্যও বাড়ছে। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে।
তিনি আরও বলেন, বর্জ্য থেকে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সেটা নিয়ে আমরা এখন কাজ করব। আমাদের সঙ্গে অনেক সংস্থা কাজ করছে। তারা বিনিয়োগ করবে এবং আমরা তাদেরকে বর্জ্য সরবরাহ করব। এতে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে।
সভায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যখন কেউ বর্জ্য ব্যবস্থা নিয়ে ভাবত না, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিষয়টি নিয়ে ভেবেছিলেন। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেছিলেন। সংবিধানে যে অধিকারের কথা বলা আছে। সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেটা নিশ্চিত করলেই বর্জ্য দুষণ থেকে বস্তিবাসিরা মুক্তি পাবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে আইনের কমতি নেই। কিন্তু আইন আমরা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারি না। তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থপনা সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, দেশে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য অর্জনে সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ পাশ হয়েছে। বিধিমালায় যুগান্তকারী বেশ কিছু পদক্ষেপ গৃহীত হলেও সামগ্রিকভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার কী কর্মকৌশল বা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে, তার কোনো সুস্পষ্ট পথরেখার ধারণা পাওয়া যায় না।
২০১৪ সালের বর্জ্য ডাটাবেসে করা অনুমান অনুসারে, ২০২৫ সালে মোট বর্জ্য ৪৭ হাজার টন উৎপন্ন হবে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে কঠিন বর্জ্য উৎপাদন ২০৩০ সালে ৫৭ হাজার টন এবং ২০৪০ সালে ৭৭ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে।
সভায় আরও বলা হয়, শহরের ৫০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে না। ফলে এসব বর্জ্য শহরে দূষণ ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় পড়ে থাকা বর্জ্যের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ ভোগান্তির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া, ঢাকার আশপাশের ল্যান্ডফিলগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ মিথেন নিঃসরণ হয়। এটা কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে ১০০ গুণ বেশি ক্ষতিকারক। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের ল্যান্ডফিল ধারণা নিয়ে ভাবতে হবে।
এসএম/এমএমএ/
