বঙ্গবন্ধু স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন মধু বেচে
আনোয়ার হোসেন আনু ৮৮ বছরের বৃদ্ধ। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাত থেকে সনদ। বর্তমানে মধু বিক্রি করে কোনরকমে জীবন ধারণ করছেন! সে সময় ডান পায়ে লাগা গুলির ক্ষত আজও তাকে তিলে তিলে কষ্ট দিচ্ছে। সেই দিনের স্মৃতি ভুলতে পারেন না তিনি। রাতে ঘুমের ঘোরেও বর্বর নির্যাতনের চিত্র চলে আসে নিদ্রায়।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর ৫০ বছর আগের সে দিনটি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকবাহিনীর হাতে নির্যাতিত একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন। কিন্তু আজ অবধি দেশের জন্য ত্যাগের কোনো স্বীকৃতি পান নি তিনি!
স্বাধীনতা-যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বীকৃত সনদপত্র নিয়ে স্বীকৃতির জন্য আজও অপেক্ষায় আছেন এই বৃদ্ধ।
আনোয়ার হোসেন আনু জানান, বীর উত্তম শাহজান ওমর-এর নেতৃত্বে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বীকৃতি না পেয়ে ৮৮ বছর বয়সে এসে ভিটেবাড়ি হারিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন পর্যন্ত পান নি কোনো সরকারি সহযোগিতাও। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম যাচাই-বাছাইয়ের সময় অর্থ না দেওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় টেকেনি আনোয়ার হোসেন আনুর নাম।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের কারাগারে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার উদ্দেশ্যে কবর খোড়া হয়। এ খবর আমার কাছে যখন পৌঁছায় আমি তখন দুজন পাকিস্তানি মিলিটারিকে গুলি করে হত্যা করেছি এবং তাদের বুক চিরে জনসম্মুখে রক্ত পান করেছি। এই বীরত্বের কথা সে সময় ছড়িয়ে পরে সারাদেশ জুড়ে।’
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে নবম সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল বরিশালের আনোয়ার হোসেন আনুকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করান এবং আনুর বীরত্বের কথা জানান। তখন বঙ্গবন্ধু নিজ হাতে স্বাক্ষরিত স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্র আনুর হাতে তুলে দেন। সে সময় আনুকে দুই হাজার টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করেন।
এই তথ্যের সত্যতা জানিয়ে আনুর সহযোদ্ধা, বরিশাল মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য, নৌ-কমান্ডার, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আবুল বাশার বলেন, ‘এরমধ্যে আমি একদিন নগরীর রূপাতলী যাওয়ার পথে দেখি আনু মধু বিক্রি করে। তখন আমি খুব দুঃখ পাই। কিন্তু কারো কাছে প্রকাশ করিনি। আমার সহযোদ্ধাকে দেখে সেদিন আমি আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমি চাই আনুকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে আমাদের পিঠ থেকে কলঙ্কের দাগ মুছে দেওয়া হোক।’
সৈয়দ আবুল বাশার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাগ্যের কি র্নিমম পরিহাস! সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আনু আজ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না পেয়ে অবহেলিত। আমি আনুর সহযোদ্ধা। যুদ্ধের সময় আমরা একসঙ্গে ছিলাম। তিনি যুদ্ধ করেছেন কোতোয়ালির কমান্ডারের নেতৃত্বে। আমার জানা মতে আনু একজন তুখোড়, পাগলাটে এবং নির্ভীক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
এসও/এএন