পুলিশ-সাংবাদিক-বিত্তবান সবাই মাদকের সাপ্লাইয়ার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘মাদকের সাপ্লাই করেন সাংবাদিক, পুলিশ ও আমাদের মত বিত্তবানরা। যারা করেন, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসি, কেউ বাদ যায় না। আপনি জেলখানায় গিয়ে দেখেন— মাদকের মামলায় পুলিশের সদস্য যেমন আছেন, র্যাবের সদস্যও আছেন, তেমনি অন্য ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। পুলিশ বলে তার জন্য আইন আলাদা হবে, বিষয়টি এমন নয়’।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘মাদকাসক্তি নিরাময়ে বেসরকারি খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ সব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশে নিয়মিত ডোপ টেস্ট করা হচ্ছে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে তাকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ জায়গাটায় আমরা খুব কঠিন অবস্থানে চলে আসছি। চাকরির শুরুতে যারা সিলেক্টেড হবে, তাদের ডোপ টেস্ট করার প্রচলন পুরোপুরি নিতে যাচ্ছি। পুলিশ-বিজিবি সব জায়গায় ডোপ টেস্টের প্রচলন রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে কি না মনে হলে সেখানেও আমরা ডোপ টেস্ট করব।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, নেশা করে মাদক নেয় চিকিৎসক, সাংবাদিক, ইঞ্জিনিয়ার, আমরাও নিয়ে থাকি। চিকিৎসকরা মাদক নেবেন না— এমনতো কথা নেই। তারা তো আলাদা জাতি না। দু-একজন পথভ্রষ্ট হতে পারে।
তিনি বলেন, মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে যে স্বপ্ন দেখছি, এই যে আমাদের উন্নয়ন, তার সব বরবাদ হয়ে যাবে যদি মাদকের ভয়াবহতা থেকে আমাদের ভব্যিষৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে না পারি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা অত্যন্ত মেধাবী। সেই প্রজন্মকে যদি মাদকাসক্তি থেকে রক্ষা করতে না পারি, তাহলে আমাদের স্বপ্ন অবাস্তবই থেকে যাবে। মাদকের চাহিদা কমাতে হলে মিডিয়ার অনেকখানি গুরুত্ব রয়েছে। আমরা মাদকের চাহিদা হ্রাসে শুধু ক্রোড়পত্র দিই না, ছোট ছোট টিভিসি বানাচ্ছি। প্রত্যেকটি জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জনবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি, ল্যাবও হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হেরোইন উদ্ধারের পর নাকি পরীক্ষায় পাউডার হয়ে যায়, অস্বীকার করছি না। কারণ শুধু পোর্টে কিংবা পুলিশে নয়, সব জায়গাতেই খারাপ-অসাধু মানুষ আছে। সীমান্তেও যেমন চোখ বন্ধ করে অনেকে আছে, তেমনি পুলিশেও অসাধু কেউ মাদক উদ্ধারের পর পাউডার দিচ্ছে ল্যাবে, এটাও সত্য।
তিনি বলেন, শক্তিশালী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন করেছি। সারা বাংলাদেশে জেলখানার ধারণক্ষমতা আছে ৪১ হাজারের বেশি। কিছুদিনের মধ্যে এটা আরও বাড়বে। কিন্তু সবসময় থাকে ৮০ হাজার থেকে লাখের বেশি বন্দি, আর এর মধ্যে ৬০ শতাংশই মাদক ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন,বিচারের সময় সাক্ষী পাওয়া যায় না, আর আমাদের লম্বা জট লেগেছে মামলার। সেখানে এই মাদক মামলা হারিয়ে যায়। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চেয়েছি মাদক মামলার জন্য, যদিও আমরা সেটা এখনো পাইনি। যদি শাস্তিটা দৃশ্যমান হত, তাহলে ডিমান্ড হ্রাস ও সাপ্লাই কমে যেত।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেন্সর লাগনো হচ্ছে সমস্ত বর্ডারে, হেলিকপ্টার টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে মাদকের সাপ্লাই বন্ধ করা সম্ভব হয়। মাদকের সরবারাহ কমাতে বিজিবি, কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশে ৬০ থেকে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত রয়েছে। ভালো হাসপাতাল না থাকা এবং মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে অভিজ্ঞ ডাক্তার, সাইকিয়াট্রিস্ট না থাকায় যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না।
এনএইচবি/আরএ/